পুলিশের গুলিতে বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের মৃত্যু হয়নি। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে ডেকে তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এ কথা জানালেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এদিন সকালে টুইটের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট উল্লেখ করে দাবি করেছে, শটগানের গুলির আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে উলেন রায়ের। আর সেই বন্দুক রাজ্য পুলিশ ব্যবহার করে না। এদিন বেলায় সাংবাদিক বৈঠকে সেই একই দাবি করেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে উলেন রায় খুন হয়েছে বলে দাবি করে নতুন ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। এ ব্যাপারে দল ও সরকারের তরফ থেকে খুব বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, পুলিশের গুলিতে ওই ব্যক্তি মারা যাননি। এবং আজকে যে রিপোর্ট পুলিশের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি, তাতে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী শটগানের গুলির আঘাতে জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। আর পুলিশ শটগান ব্যবহার করে না।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘সোমবার বিজেপি–র উত্তরকন্যা অভিযানে ওই ব্যক্তি ছাড়াও আরও কয়েকজনের কাছে শটগান ছিল। সশস্ত্র ওই ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা। কিন্তু নিজেদের শটগানেই উলেন রায় নামে ওই ব্যক্তি আহত এবং পরে নিহত হন।’ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, ‘ওই ঘটনার সময় পুলিশ ছিল একদিকে আর মৃত ব্যক্তি ছিলেন অন্যদিকে। যদি খুব কাছ থেকে পরপর বেশ কয়েকটি গুলি না করা হয় তবে এই ধরনের বন্দুকে কারও মৃত্যু হয় না।’
এদিন বিজেপি–র প্রতি নিন্দা জানিয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি আগে সিপিএম করেছিল। কিন্তু কোনও দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল সাধারণভাবে এটা করে না। কিন্তু আজ লক্ষ্য করছি, ক্ষমতার লোভে বিজেপি পাগল হয়ে গিয়েছে। দিল্লির ক্ষমতা থেকেও বড় ক্ষমতা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা। তারা বেপরোয়া হয়ে গিয়েছে।’
এদিকে, নিহত ব্যক্তির কাছেও একটি শটগান ছিল বলে পুলিশের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘আমরা যে কোনও মৃত্যুকেই দুঃখের মনে করি। কিন্তু ওইদিন বিজেপি–র মূল উদ্দেশ্য ছিল, কোনও মিটিং, প্রতিবাদ সভা নয়, প্ররোচনা তৈরি করা যাতে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। কিন্তু হাজারো প্ররোচনা থাকলেও পুলিশ প্ররোচিত হয়নি। লাঠি উচিয়ে তাড়া করা ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে আর কিছু পদক্ষেপ করা হয়নি। তবে দু–একটা লাঠির আঘাতও কেউ কেউ খেয়ে থাকতে পারে।’ পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের ধৈর্য্য দেখে আমি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছি। পুলিশ নিজে মার খেয়েছে, কিন্তু তারা গুলি ব্যবহার করেনি।’
যদিও বিজেপি–র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর দাবি, ‘রিপোর্ট থেকে আমাদের অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে যে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ছিল এবং উলেনকে তারাই গুলি করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা হাস্যকর। কারণ পুলিশের ব্যারিকেডের দিকে যাওয়ার সময় উলেনের বুকে গুলি লেগেছে। যদি মিছিলের কেউ তাঁকে গুলি করত, তাহলে পিছনে গুলি লাগত।’