মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় রাসবিহারীতে বাম–নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছিল। প্রতিবাদ সভা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের বলে অভিযোগ। এই নিয়ে কুণাল ঘোষ আগেই কটাক্ষ করেছেন বাম–নেতাদের। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পোস্ট করেন— ‘চাকরি বিক্রি’ করা যাবে, কিন্তু ‘বই বিক্রি’ নিষিদ্ধ এই রাজ্যে! এই পোস্ট তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেই করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে সিপিআইএম নেতাদের ‘মানসিক চিকিৎসা’র প্রয়োজন বলে আক্রমণ করেছেন রাসবিহারী বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক দেবাশিস কুমার।
ঠিক কী লিখেছেন সিপিআইএমের রাজ্যসভার সাংসদ? পুলিশ প্রশাসন ও শাসকদলকে ঠুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মমতার রাজ্যে বই বিক্রি করার অপরাধে বামপন্থী কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। পুজোর নামে সমাজবিরোধীদের জমায়েতকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। আমার বক্তব্যের পরই একদল তৃণমূলই অশ্রাব্য গালিগালাজ করে আমার উদ্দেশ্যে। ওই সব গালিগালাজ সাধারণত ভদ্রলোকেরা করে না। গুন্ডামি করে অটোতে লাগানো মাইক ভাঙ্গার চেষ্টা করে। আমরাও প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াই। আইপিএস আশিসের নেতৃত্বে পুলিশ বই স্টল বন্ধের হুমকি দেয়। আমার তোপের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা করে। আমি গ্রেফতারের মেমো দাবি করলে থমকে গিয়ে বলে, প্রিভেন্টিভ গ্রেফতার। লিখিত কারণ দিতে বলি ও পুলিশের গাড়িতে উঠতে অস্বীকার করি। একটু ভয় পেয়ে গিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই কমলেশ্বর–সহ কয়েকজনকে ভ্যানে তুলে নেয়। বইয়ের স্টল চলবে, এই প্রতিশ্রুতি পুলিশের তরফ থেকে দেবার পরই আমি ওই স্থান পরিত্যাগ করি। আমি থাকলেই নাকি তৃণমূলীরা ক্ষিপ্ত হচ্ছে।’
ঠিক কী বলেছেন দেবাশিস কুমার? বিকাশের পোস্ট নিয়ে রাসবিহারী বিধানসভা এলাকার বিধায়ক দেবাশিস কুমার বলেন, ‘প্রথমত বিকাশবাবুরা দুর্গাপুজোয় বিশ্বাস করেন না। তাই যাঁরা পুজো করেন, তাঁরা পুজো উদ্যোক্তা না সমাজবিরোধী এই তফাতটুকুও বোঝেন না। তাই ওঁদের কোনও অভিযোগের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। ওঁরা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা পুজোর সময় কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ ঘটাতে পারেন না। এটা ওঁদের বিকৃত মানসিকতার পরিচয়। তাই আমার মনে হয় বিকাশবাবুদের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।’
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছিল? রাসবিহারীর কাছে সিপিআইএমের বুক স্টলে লাগানো ছিল ‘চোর ধর, জেল ভর’ স্লোগান। যা দুর্গাপুজোর মধ্যে প্ররোচনা দেওয়ার সামিল বলে মনে করে পুলিশ। তখন তাঁদের তা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে পুলিশ। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। এরপর ওই বুক স্টলে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিআইএমের অভিযোগ, সেই পোস্টার দেখেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই বিপণিতে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে অষ্টমীর দিন বিকেলে রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে জমায়েত করেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সিপিআইএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, রবীন দেব, কল্লোল মজুমদার, গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়রা। অভিযোগ, সেই বই বিপণি আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়ে পুজো কমিটির সঙ্গে গণ্ডগোল বাধে। তখন পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।