নয়াদিল্লি স্টেশনে কুম্ভ যাত্রীদের পদপিষ্টের ঘটনায় এখন গোটা দেশ উত্তাল। আর এই ঘটনা আবার একবার ভারতীয় রেলের কঙ্কালসার চেহারাটা সামনে নিয়ে এল। যাত্রী নিরাপত্তা নেই, পরিকাঠামোর অভাব, পরিষেবা শিকেয়, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। রেল যা কিনা কোটি কোটি মানুষের জীবনে ‘লাইফলাইন’ সেটাই হয়ে উঠেছে আতঙ্কের অপর নাম। আজ, সোমবার এক্স হ্যান্ডেলে রেলের ওই চূড়ান্ত অব্যবস্থা নিয়ে তোপ দেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ডেরেক ও’ব্রায়েনের করা পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় রিপোস্ট করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেয়ার করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকেও। এই ঘটনার জন্য এবার রেলমন্ত্রীকে ‘হাফ–মন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করল তৃণমূল কংগ্রেস।
এদিকে রেলের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে অবহেলার অভিযোগ আগেই সংসদে করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার সেটা আবার তুলে ধরা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা পোস্ট করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই ঘটনায় আজ রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলে শিয়ালদায় বিক্ষোভে সামিল হয় কংগ্রেস। পোস্টার, ব্যানার হাতে স্টেশন চত্বরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে প্রতিবাদ দেখালেন কংগ্রেস কর্মীরা। ওই এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, ‘ভারতীয় রেল লক্ষ লক্ষ মানুষের লাইফলাইন। কিন্তু বিজেপির শাসনব্যবস্থায় সারা দেশে রেল একটি মাল্টিটাস্কিং সার্কাসে পরিণত হয়েছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ, নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রয়াগরাজগামী ট্রেনে উঠতে গিয়ে পদদলিত হয়ে পাঁচজন নিষ্পাপ শিশু–সহ ১৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তারপরও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই, কোনও হুঁশ ফেরেনি। এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন কি রেলমন্ত্রী? তিনি এখনও চেয়ার আঁকড়ে বসে আছেন।’
অন্যদিকে শনিবার রাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল নয়াদিল্লি স্টেশন। মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীদের ভিড়, যাত্রীদের তাড়াহুড়োর মধ্যে পড়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১৮ জন। তাদের মধ্যে ১১ জন মহিলা এবং ৪ জন শিশু। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অনেকে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা নয়। এটি দেশের সবচেয়ে বড় রেল পরিষেবায় চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং অবহেলার নজির বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের পদপিষ্টের ঘটনা হাফ–মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের অপরাধমূলক অবহেলার ফল। আসলে তিনি তাঁর এই চাকরিকে পিআর স্টান্ট হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। তাই বারবার অব্যবস্থা এবং উদাসীনতার জেরে প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।’
আরও পড়ুন: ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখে বন্ধুকে খুনের ষড়যন্ত্র, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ভাবাচ্ছে পুলিশকে
এছাড়া আজ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডলে রেলমন্ত্রীর বিরোধিতা করে কড়া ভাষায় পোস্ট করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তোপ, ‘এই ঘটনা রেলের ‘হাফ–মন্ত্রী’ অশ্বিণী বৈষ্ণবের চরম উদাসীনতার পরিচয়। শুধু লোক দেখানো কাজ করেন তিনি। দেশের পরিবহণ ব্যবস্থার ‘লাইফলাইন’কে ক্রমশ বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।’ আজও দেখা গিয়েছে, ট্রেনে ওঠার লাইনে বিশৃঙ্খলা। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আরপিএফের কোনও ব্যবস্থা নেই। রেল শুধু দুই সদস্যের কমিটি করেই ক্ষান্ত হয়েছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের সিসিটিভি মনিটরিং পদ্ধতি। স্টেশনের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল ছিল বলে সূত্রের খবর।