বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে আজ, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জেলার নেতা– কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখান থেকেই বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতাকে কড়া ভাষায় নিশানা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই দলের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এমনকী তাঁকেও মুখোমুখি হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার।
ঠিক কী বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা? আজ, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসকে যত আঘাত করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ততই শক্তিশালী হয়েছে। এটা পরীক্ষিত সত্য। আজ এখানে যত মানুষ এসেছেন তা এক রেকর্ড। দলের কর্মীদের অনুরোধ নেত্রীর বার্তা নিয়ে বুথে বুথে তা কার্যকর করুন। আপনারা দেখেছেন বিধানসভা নির্বাচনে গোহারা হেরেছে ওরা। তার পরের দিন বাংলার চারজন নেতা মন্ত্রীকে ইডি–সিবিআই লাগিয়ে গ্রেফতার করিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নয়াদিল্লিত অ্যাটাচ করেছে। যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত–পা বেঁধে দেওয়া যায়। আমরা বলেছিলাম বদলা নয় বদল চাই। আমরা জিতেছি। কিন্তু আমরা বদলা নেব ব্যালটে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ওরা হারবে। গোটা দেশ দেখছে দেশের একমাত্র দল তৃণমূল কংগ্রেস যে ইডি–সিবিআইয়ের সঙ্গে মাথা উঁচু করে লড়াই করছে। আমরা মাথা নত করব না। যদি মাথা নত করতেই হয় তাহলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে করব। দিল্লির জল্লাদদের কাছে নয়।’ এটা অবশ্যই দলের নীচুস্তরের কর্মীদের কাছে ভোকাল টনিক বলে মনে করা হচ্ছে।
কী বার্তা দিয়েছেন অভিষেক? এদিন বিজেপিকে তুলোধনা করেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। এখান থেকে অভিষেক বলেন, ‘বাংলার হার্মাদ ও দিল্লির জল্লাদরা এখন এক হয়েছে। বিজেপি বলত দিদি বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেয় না। আজ কী বলছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাজ্য থেকেই দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে। ওরা বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫০ কোটি টাকা ক্লাবগুলিকে দুর্গাপুজোর জন্য দিয়েছে। কেন দেবে না? তুমি ৩ হাজার কোটি টাকার মূর্তি গড়তে পারো, আর মমতা ওই টাকা ক্লাবগুলিকে দিতে পারে না! দুর্গাপুজো বাংলার গর্ব। তোমরাই তো বলতে দুর্গাপুজো এখানে হয় না। এখন দুর্গাপুজো বিশ্বদরবার বন্দিত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ১ কোটি মহিলাকে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেবেন। তিনি তা দিয়েছেন। দিলীপ ঘোষ বলছেন তৃণমূল কংগ্রেস বস্তির পার্টি। হ্যাঁ, তৃণমূল কংগ্রেস খেটে খাওয়া মানুষের পার্টে। এটাই আমাদের গর্ব। মনে রাখবেন এদের কাছে হার স্বীকার করতে হয়েছিল।’
শুভেন্দুকে ঠিক কী বলেছেন অভিষেক? এদিন সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। আগে তাঁর কাজকর্ম ফাঁস করেছিলেন। যদিও শুভেন্দু পাল্টা মানহানির মামলা করা থেকে পিছিয়ে গিয়েছেন বলে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি। এই নিয়ে দলের কথা বলতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘এই দলে কোনও লবি নেই। এখানে একটাই লবি, মমতার লবি। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওদের ল্যাজে গোবরে করতে হবে। দেখুন, পেট্রল–ডিজেলের দাম কোথায়? এদের জবাব দিন। মমতার উপরে কত না আক্রমণ হয়েছে। নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। এবার তা এসেছে কলকাতা হাইকোর্টে। কত ধানে কত চাল তা আপনাকে দেখাব লোডশেডিং বাবু। আপনি কি ভাবেন? কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে রাজনীতি করবেন? আমি সেদিন অমিত শাহকে বলেছি উনি ভারতের সবচেয়ে বড় পাপ্পু। তার চারটে কারণ রয়েছে। উনি হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একমাত্র অপদার্থ মন্ত্রী। দেখুন নয়াদিল্লির অপরাধের পরিসংখ্যান এবং বাংলার পরিসংখ্যান।’ নন্দীগ্রামের ভোট গণনার সময় লোডশডিং হয়ে গিয়েছিল। তার আগে ঘোষণা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী। আলো নিভে যাওয়ার পর আবার যথন আলো আসে তখন ঘোষণা করা হয় শুভেন্দু অধিকারী জয়ী।