সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বাংলার কৃষকদের বঞ্চিত করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার— শুক্রবার কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প উপলক্ষে কৃষকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনফারেন্স করার সময় এভাবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের বিরোধিতার জন্যই কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন বাংলার কৃষকরা। আর প্রধানমন্ত্রী এই অভিযোগ তোলার পরপরই তাঁকে জবাব দিল রাজ্যের শাসকদল।
মোদীর দাবিকে ‘সর্বৈব মিখ্যা’ বলে এদিন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘মোদির বক্তব্য অসত্য। আমরা কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের টাকা রাজ্যের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে তুলে দিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে দু’বার চিঠি দিয়েছি। আর তা ছাড়া এই রাজ্যে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে ২৬০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। আর তাতে উপকৃত হয়েছেন বাংলার ৪৭ লক্ষ কৃষক। কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে রাজ্যের প্রকল্পে বাংলার কৃষকরা অনেক বেশি টাকা পাচ্ছেন।’
এদিন প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে সৌগত রায় বলেন, ‘মাত্র ৬ হাজার টাকা দিয়ে নাম কিনতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। এমন ভাব করছে যেন ৬ হাজার টাকা নয়, ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে।’ সৌগত রায়ের প্রশ্ন, ‘বাংলায় ১০ বছর মমতার সরকারে কোনও কৃষক আন্দোলন হয়েছে?’ তাঁর কথায়, ‘রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকদের কোনও অভিযোগ নেই। রাজ্য সরকারের বাজেটে সংশ্লিষ্ট বিষয় কৃষকদের স্বার্থে ৫ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে।’
কেন্দ্রের কৃষি আইনের সমালোচনা করে সৌগত রায় বলেন, ‘এই আইনে বাজারে যদি ফসলের দাম বাড়ে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরাই। আর আগের দামে ফসল কিনে নিয়ে যাবে পুঁজিপতিরা। কৃষি আইনে কৃষি পণ্যের ব্যবসাকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য আইনের মাধ্যমে চুক্তি চাষ চালু করতে চাইছে কেন্দ্র।’ সৌগতর অভিযোগ, ‘মহারাষ্ট্রে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। এই সব মূল বিষ থেকে সরে যাচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।’
ইতিমধ্যে পঞ্জাবে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। সেই কথা উল্লেখ করে সৌগত রায় বলেন, ‘কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের ১১টি রাজনৈতিক দল নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছে। রাজ্যসভায় গায়ের জোরে কৃষি বিরোধী আইন পাস করেছে কেন্দ্র।’
এদিন টুইট করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি–র সহকারী পর্যবেক্ষক তথা বিজেপি–র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তিনি লিখেছেন, ‘পিসির ইগোর জেরেই এই রাজ্যের কৃষকদের এত দুর্দশা।’ তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের ৭২ লক্ষ কৃষকের মধ্যে কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন ২৩ লক্ষ কৃষক। কিন্তু তাঁদের স্বীকৃতি দেননি পিসি।’ এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সৌগত রায় বলেন, ‘অমিত মালব্য কে? কোথা থেকে এসেছে তাও জানি না। তিনি হয়তো জানেন না যে অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলার কৃষকদের আয় বেড়েছে।’