এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি এঁটে উঠতে পারেনি। বরং তাঁদের আসন সংখ্যা কমে গিয়ে ১৮ থেকে ১২ হয়ে গিয়েছে। আর ২৯টি আসন একাই দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস একটি আসনে জয় পেয়েছে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের এই জয়ের পিছনে অন্যতম কারণ ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প বলে অনেকের ধারণা। তাই মহিলাদের বিপুল ভোট পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের রাস্তা মসৃণ হয়েছে। কিন্তু কোন মহিলারা ভোট দিয়েছেন? এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিল রাজ্য–রাজনীতিতে। কারণ এবার নিজের উপলব্ধির কথা প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সৌগত রায়।
এদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের দৌলতে বাংলার মহিলা ভোটারদের বেশিরভাগই যে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন সেটা কিন্তু নয়। বরং শহর এলাকার মহিলা ভোটারদের মন ঘাসফুলের দিকে ছিল না বলে মনে করেন চারবারের জয়ী সাংসদ সৌগত রায়। মঙ্গলবার বরাহনগরে একটি রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে নিজের উপলব্ধির কথা এভাবেই জানিয়ে দিলেন তিনি। দমদমের সাংসদ বলেন, ‘ঝুপড়ির গরিব মহিলারা যাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেয়েছেন তাঁরাই আমাদের রক্ষাকর্ত্রী। গরিব মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছেন। গ্রামের মহিলারা সবাই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু শহরের অবস্থাপন্ন মহিলা, যাঁরা বড় ফ্ল্যাটে থাকেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেননি। আবার সংখ্যালঘুরা একশো শতাংশ ভোট দিয়েছেন আমাদের।’
আরও পড়ুন: ‘ওহ, আপনি আমায় পরাজিত করেছেন’, নবীনের চতুরতায় ঘায়েল বিজেপি বিধায়ক বিধানসভায়
অন্যদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে বিজেপি নেতারা নানা কথা বলেছেন। এমনকী বিজেপি নেত্রী এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তবে শুধু এই প্রকল্পের জন্যই এত বড় সাফল্য এসেছে তেমন নয়। বিজেপি সাংসদরা কাজ করেননি বলেই তৃণমূল কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন বাংলার মানুষ। তবে সৌগত রায়ের বক্তব্য, ‘মহিলারাই আমাদের জিতিয়েছেন। যাঁরা বহুতলে থাকেন, অনেক জায়গায় তাঁরা আমাদের ভোট দেয়নি।’ লোকসভা নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, কম করে ১৫টি আসনেই মহিলা ভোটেই বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একের পর এক নারীকল্যাণমূলক প্রকল্প এই জয়ে অনুঘটকের কাজ করেছে।
কিন্তু সৌগত রায়ের কথায়, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার শহরাঞ্চলে তেমন প্রভাব ফেলেনি।’ এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প শুরু হয় ৫০০ টাকা দিয়ে। এখন তা হাজার টাকা হয়েছে। আর তফসিলি মহিলারা আগে পেতেন হাজার টাকা। এখন পান ১২০০ টাকা মাসে। সুতরাং এই প্রকল্প একটা বড় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আরও একটা বিষয় কাজ করেছে। সেটি হল—১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মিটিয়ে দিয়েছে। যা দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। আবার এই বছরের মধ্যে আবাসের প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে যাবে বলা হয়। এগুলি সবই কাজ করেছে গ্রামবাংলা জুড়ে। কিন্তু শহরে তেমন প্রভাব ফেলেনি।