ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় সিবিআই-সিট তদন্তের নির্দেশ নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিল তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, কলকাতা হাইকোর্টের সম্পূর্ণ নির্দেশ পর্যালোচনা করে দেখা হবে। তারপর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে মন্তব্য করা হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর কুণাল জানান, হাইকোর্টের রায়ের পুরোটা বিশ্লেষণ করা হবে। বিষয়টির উপর নজর রাখছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সঙ্গে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যথাসময়ে বিষয়টি জানাবে।’ তবে সূত্রের খবর, আপাতত হাইকোর্টের রায় খুঁটিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হতে পারে সূত্রের খবর। রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য এখনও মুখ খোলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ, হত্যা, ধর্ষণ এবং মহিলাদের উপর অপরাধের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। এছাড়া বাকি অভিযোগের তদন্ত করবে সৌমেন মিত্র, সুমন বালা, রণবীর কুমারকে নিয়ে গঠিত তিনজনের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। সিটের তদন্ত আদালতের নজরদারিতে হবে। সেজন্য সুপ্রিম কোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করা হয়েছে।
কতদিনের মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে, তাও উল্লেখ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছ'সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং সিটকে অন্তর্বর্তীকালীন তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় রাজ্যকে পুরোপুরি সহযোগিতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট জানিয়েছে, নয়া ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হবে। যে মামলার শুনানি হবে আগামী ২৪ অক্টোবর। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিল রাজ্য সরকার, তার কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর যে ‘হিংসা’ ছড়িয়েছিল, তা নিয়ে কমিশনের রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে শাসক দল তৃণমূলের সমালোচনা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়ে, ‘রাজ্যের যা অবস্থা, তাতে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে।’ দাবি করা হয়, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের মাটিতে হিংসার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে ভিটেছাড়া হতে হয়েছে। এই ধরনের হিংসার ঘটনায় অবিলম্বে লাগাম টানতে হবে। সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভারতীয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে। হিংসা ছড়িয়ে পড়বে অন্য রাজ্যেও। সেইসঙ্গে রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়। পরামর্শ দেওয়া হয়, আদালতের পর্যবেক্ষণ তদন্ত করা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সেই সুপারিশ কার্যত মেনে নিলেও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কমিশনের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটিকে সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাই যে রিপোর্টের যে অংশে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা আইনের চোখে ঠিক নয়।