বঙ্গভঙ্গের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে এবার বিধানসভায় প্রস্তাব আনছে তৃণমূল। সেই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি বঙ্গভঙ্গ করার সমস্ত রকম অপচেষ্টা চালাচ্ছে যা রাজ্যের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী এবং যেহেতু রাজ্যে সকল শ্রেণির মানুষের ঐক্য ও সংহতি অক্ষুণ্ণ রাখা রাজ্যের জনগণের আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, সেইহেতু এই সভা এই ধরণের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করছে এবং রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গকে অটুট রাখার জন্য সকলস্তরের জনগণের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিধায়ক তথা রাজ্য়ের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মন এই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী মোশন আনতে চলেছেন। রাজ্য বিধানসভায় এনিয়ে আলোচনা হবে। সেক্ষেত্রে দলের সমস্ত বিধায়ককে বিধানসভায় হাজির থাকার জন্য তৃণমূল পরিষদীয় নেতৃত্ব নির্দেশ দিয়েছেন।
আসলে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য় করার দাবি বহুদিনের। বিগতদিনে বৃহত্তর কামতাপুর রাজ্যে গড়ার দাবিতে সরব হতেন একাধিক আঞ্চলিক সংগঠন। অন্যদিকে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের অনন্ত রায় গোষ্ঠীও পৃথক রাজ্যের দাবিতে বার বার সরব হয়েছে। এনিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখাও করেছেন তারা। এনিয়ে উত্তরবঙ্গে আন্দোলন কিছু কম হয়নি। নিম্ন অসমের একাংশকেও এই পৃথক রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে কামতাপুর রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন। বৃহত্তর কোচবিহার রাজ্যের দাবিতেও সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন।
পাশাপাশি পাহাড়েও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়েছে বার বারই। বিগতদিনে মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে এই আন্দোলনের জেরে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা পাহাড়। এরপর তিস্তা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। বর্তমানে বিজেপির একাধিক জনপ্রতিনিধি মাঝেমধ্যেই পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব হন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা, বিধায়ক বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা সহ কয়েকজন মাঝেমধ্যেই পৃথক রাজ্য়ের দাবিকে সামনে আনেন।
তবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য় এই দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেনননি। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই পৃথক রাজ্য়ের পক্ষে সরাসরি কোনওদিন মন্তব্য করেননি। তবে উত্তরবঙ্গে বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে এনে বার বারই নানা ভাবাবেগকে উসকে দেওয়া হয়েছে। তবে এবার সেই পৃথক রাজ্যে তৈরির সমস্ত রকম অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বিধানসভায় লিখিত প্রস্তাব আনতে চলেছে তৃণমূল। আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের আগে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।