গত কয়েকদিনের নিম্নচাপের জেরে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। তার ফলে নদীগুলিতে হুহু করে বেড়েছে জলস্তর। পাশাপাশি ডিভিসি থেকে জলছাড়ার ফলে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। এরফলে হুগলি নদীর জলে দূষণের অনেকটাই বেড়েছে। সাধারণত হুগলির জল শোধন করে পরিশ্রুত পানীয় জলে রূপান্তর করে শহরের মানুষকে সরবরাহ করে থাকে কলকাতা পুরসভা। তাই হুগলির জলকে জীবনে মুক্ত করতে এবং পান করার জন্য নিরাপদ করতে দ্বিগুণ মাত্রায় ক্লোরিন দেওয়া হচ্ছে। শোধনাগারে পরিশোধনের আগে কাঁচা জলে আরও ক্লোরিন দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, জলকে জীবাণুমুক্ত করার জন্যই এই পদক্ষেপ কলকাতা পুরসভার।
আরও পড়ুন: টালার ৬ গুণ ক্ষমতা, রাজ্যের বৃহত্তম জল শোধনাগার পেল হুগলি! কোন এলাকার লাভ? কবে চালু?
কেএমসির জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ডিভিসির ব্যারেজগুলি থেকে জল ছাড়ার ফলে হুগলির জলে দূষণের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে এখন শহরে জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় হুগলির জলে নোংরার মাত্রা ৪০০ নেফেলোমেট্রিক টারবিডিটি ইউনিট (এনটিইউ)। তবে ডিভিসি থেকে জল ছাড়ার ফলে তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ এনটিইউ, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে জলে দ্বিগুণ মাত্রায় ক্লোরিন যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূলত ধাপা, গার্ডেন রিচ এবং পল্টার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে এগুলি করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জল শোধনাগারে পৌঁছনোর আগেই ক্লোরিন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জল অস্বাভাবিক মাত্রায় অস্বচ্ছ থাকলে তা যে শুধু পান করার অযোগ্য হবে তাই নয়, এরফলে সেডিমেন্টেশন ট্যাঙ্কে ব্যবহৃত মেশিনগুলিরও ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে কাদা ও পলি জমে মেশিনগুলি বিকল হয়ে যেতে পারে। আর যদি মেশিন বিকল হয়ে যায় তাহলে জল যন্ত্রণায় ভুগতে হতে পারে শহরবাসীকে। নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, গার্ডেন রিচ প্ল্যান্ট থেকে দক্ষিণ কলকাতার বড় অংশে পানীয় জল সরবরাহ করে থাকে কলকাতা পুরসভা। ধাপা প্ল্যান্টের মাধ্যমে ইএম বাইপাসের পাশের এলাকায় পানীয়ের চাহিদা মেটানো হয়। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে সেই কারণেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
যদিও হুগলির জলের ঘোলাটে সমস্যা দীর্ঘদিনের। ২০২৩ সালে নদীতে আকস্মিকভাবে জলস্তর বৃদ্ধির কারণে পল্টা প্ল্যান্টে উচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় জলে অ্যালুমের পরিমাণ এবং ক্লোরিনের পরিমাণও বাড়িয়েছিল।কেএমসি-এর আধিকারিকদের মতে, জলে ১০০ নেফেলোমেট্রিক টার্বিডিটি ইউনিট স্বাভাবিক। কিন্তু এর বাইরে চলে গেলে সেটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।