শুরুতেই হোঁচট খেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক–প্রসূত পরিকল্পনা। রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামো আরও উন্নত করার স্বার্থে সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সংক্রামক রোগের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ভিনরাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে আনার ব্যবস্থাও করে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু নিয়োগের সেই বিজ্ঞপ্তি নাকচ করেছে দুই সিনিয়র কনসালট্যান্ট। আর একজন চিকিৎসক এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
নিয়োগের তালিকায় থাকা ওই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নীতীন গুপ্ত শুক্রবার জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তাঁদের পক্ষে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে কাজে যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজারা পত্রিকা–কে জানিয়েছেন, ‘এখন বিভিন্নরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। সে সব ছেড়ে কলকাতায় আসা সম্ভব হচ্ছে না।’ বাগবাজারের আদি বাসিন্দা নীতীন গুপ্তের বক্তব্য, ‘এখন একটি স্থায়ী চাকরির সঙ্গে যুক্ত। এতে অধ্যাপনার সুযোগও রয়েছে। বেলেঘাটা আইডি–র কাজটি স্থায়ী নয়। তাও যদি অধ্যাপনার সুযোগ থাকত, তবে কলকাতায় ফিরে কাজ শুরু করার চেষ্টা করতাম।’
কোভিডের মতো সংক্রামক ব্যাধি সামাল দিতে চলতি বছরের জুলাই মাসে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি একই বিষয়ে গবেষণা এবং পড়াশোনার জন্য স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ‘অ্যাডভান্সড মাইক্রোবায়োলজি’ বিভাগ তৈরির কথা বলেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির পরামর্শে সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রামক রোগের দু’জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। রাজ্যপালের অনুমোদন মিললে ১৪ অক্টোবর সেই তিন পদে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দফতর।
ওই তিন বিশেষজ্ঞের মধ্যে সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীতীন গুপ্ত এইমস থেকে সংক্রামক রোগে ডিএম করেছেন। এই দু’জনকে সিনিয়র কনসালট্যান্ট সিনিয়ার কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ করার ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছেন। আর কর্নাটকের কস্তুরবা মেডিক্যাল কলেজে সংক্রামক রোগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর চিকিৎসক নীতীন গুপ্ত। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে মনোনীত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুপ আগরওয়াল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চে (আইসিএমআর) কনসালট্যান্ট ছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা অনুপবাবু জানান, ‘যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও মনস্থির করিনি। কী করব ভাবছি।’
কিন্তু রাজ্যের এই ‘অফার’ নিতে কেন বেঁকে বসছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা? জানা গিয়েছে, দু’বছরের চুক্তির ভিত্তিতে এই কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ করা হবে। আর তাতে অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষণার সুযোগ তেমন পাওয়া যাবে না। সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ জানান, এ কারণেই পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন ওই বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ, শনিবার। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ওই তিন বিশেষজ্ঞ সরকারি পদ গ্রহণে রাজি না হলে অন্য কোনও চিকিৎসককে সেই পদে নেওয়া হবে।