কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিছুদিন আগে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পরিবেশ রয়েছে। দলের সবাই সেটার পক্ষেই সওয়াল করেছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। এই মন্তব্যের পর শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতিতে। এবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে সওয়াল করে তৃণমূলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি সাংসদ তথা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা আছে। রাজ্য সরকার যেভাবে বাংলার মানুষের উপর সন্ত্রাস নামিয়ে আনছে তাতে কেন্দ্রের পক্ষে অসম্ভব নয় সেই পথে হাঁটা।’
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৬ ধারা কার্যকর করার ইঙ্গিত দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হলে সংবিধান বর্ণিত ব্যবস্থা অবলম্বন করেই ভোটগ্রহণ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস একশোর বেশি বিজেপি কর্মীকে খুন করেছে রাজ্যে। তৃণমূল অবশ্য এই দাবিকে অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এদিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বাবুল বলেন, ‘রাজ্যে বিজেপি কর্মীরা লাগাতার খুন হচ্ছে। আর দিদি যদি ভেবে থাকেন কেন্দ্রে দুর্বল সরকার বসে আছে তাহলে তিনি সবচেয়ে বড় ভুল করবেন। কারণ সংবিধানে এই সব সরকারকে টাইট দিতে পরিষ্কার করে দাওয়াইয়ের কথা লেখা রয়েছে। আর সে পথে হাঁটা অসম্ভব নয়। বিজেপি কর্মীদের উপর এবং মানুষের উপর অত্যাচার নামিয়ে এনে ভোট না দিতে পারার ছক বানচাল করে দেওয়া হবে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন, রাজনৈতিক হিংসা করে মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না।
এই বিষয়ে তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘বাবুল সুপ্রিয়র মন্তব্য আমি শুনেছি। তিনি ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের প্রস্তাবের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে সংবিধানে ব্যবস্থা রয়েছে। তৃণমূল এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ৩৫৬ ধারা কার্যকর করতে গেলে সুপ্রিম কোর্টে পরিষ্কার করে বলা আছে কোন প্রেক্ষিতে এটা করা যায়। ওঁর এই রাজনৈতিক বিবৃতির কোনও মূল্য নেই। পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা এমন জায়গায় পৌঁছায়নি যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হবে।’
একই সঙ্গে প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে যখন একজন অপরাধী আটজন পুলিশকে গুলি করে মারে, তখন আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে না। ২০ বছরের দলিত তরুণীকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা ভাঙে না? তুফানগঞ্জে বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বিজেপি সমর্থকের মৃত্যু হলে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগ করা হয়। ৩৫৬ কার্যকর করতে হলে আগে উত্তরপ্রদেশে করা উচিত।’ এমনকী সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা ৩৫৬ ধারার পক্ষপাতী নই। আসলে ভোটের ময়দানে ৩৫৬ ধারার হুজুগ তুলে বিজেপি তৃণমূলকে সাহায্য করতে চাইছে।’