আরও একটা দুর্গাপুজ চলে এসেছে। প্রতিবার মেয়েই বাড়ির দুর্গাপুজোয় যাবতীয় আয়োজন করে থাকে। আর দুর্গাপুজো এলেই যেন বাড়ি সবসময় জমজমাট থাকত। কিন্তু, এবার পুজোটা আলাদা। কারণ এবার মেয়ে নেই। ফলে দুর্গাপুজোর সেই চেনা আমেজও উধাও। পুজো শুরু হওয়ার আগেই যেন বিসর্জনের বিষন্নতা আরজি করে নির্যাতিতার পরিবারে। সেই স্মৃতিগুলি মনে করে আর নিজেদের সামলাতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। প্রতিবার মহালয়ার দিন বাড়িতে যেভাবে হইহুল্লোড় আর আয়োজনে বাড়ি সরগরম হয়ে থাকে এবার যেন অভয়ার বাড়িতে গ্রাস করেছে নিরবতা। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁদের দুর্গা বিচার পাবেই।
আরও পড়ুন: ‘উৎসবে ফিরছি না বলা লোকেদের মুখে ঝামা….’, মহালয়ায় জনজোয়ার দেখেই কটাক্ষ দেবাংশুর
মৃতা চিকিৎসকের মা জানান, সমস্ত বাঙালি পরিবারের মতো মেয়ে সহ তাঁরাও এবার দুর্গাপুজোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। নির্যাতিতা ২০২১ সালে প্রথমবার বাড়িতে দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছিলেন। তারপর থেকে প্রতিবছর বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। তবে এবার বড় করে পুজো করার পরিকল্পনা ছিল নির্যাতিতার। কারণ এবার তাঁর পড়া শেষ করার কথা ছিল। আর সেই খুশিতেই বড় আকারে তিনি পুজোর আয়োজন করতে চেয়েছিলেন।
তিনি জানান, যখন তাঁর মেয়ে দুর্গাপুজো শুরু করার কথা বলেছিলেন তখন তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। মেয়েকে তিনি বলেছিলেন আয়োজনে প্রচুর খাটুনি। তবে মেয়ে তাঁকে বলেছিলেন, মা ও মেয়ে দুজনে একসঙ্গে মিলে পুজোর আয়োজন করলে কোনও সমস্যা হবে না। নির্যাতিতার মায়ের কথায় তার পর থেকেই বাড়িতে ভালোভাবে দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়ে আসছিল। কিন্তু, এবার যেন সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। মায়ের কথায়, যে তাঁদের আসল দুর্গা তাঁরই বিসর্জন হয়ে গিয়েছে আরজি কর কাণ্ডের সেই বিভীষিকাময় রাতে। তাঁদের কথায়, দুর্গা আসার আগেই বিসর্জন হয়ে গিয়েছে।
নির্যাতিত মা জানান, এ বছর আগে থেকেই দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি অনেকটা সেরে ফেলেছিলেন তাঁর মেয়ে। তিনি জানান, দুর্গা প্রতিমার জন্য শাড়ি কেনা ছিল। ঢাকিদেরও আগে থেকেই বায়না দেওয়া হয়েছিল। নিহত চিকিৎসকের মা অশ্রুজলে ভর্তি চোখে জানান, প্রতি বছর মহালয়ার দিন প্রদীপ জ্বালাতেন । তারপর ৯ দিন ধরে চলত নিরামিষ ভোজন। শেষে দশমীতে গিয়ে নিয়মভঙ্গ হত। আত্মীয়রাও বাড়িতে থাকতেন। শুধু তাই নয়, ছোটবেলা থেকে দুর্গাভক্ত অভয়া শিবের মাথায় জল দিয়ে পুজো করতেন। মা জানান, প্রথম মেয়েরে মুখে বাড়িতে দুর্গাপুজোর কথা শুনে তিনি জানান, এত খরচ, খাটুনি সম্ভব নয়। তবে নির্যাতিতা মাকে বলেছিলেন শুধু ভোগ করার জন্য আর ঠাকুরঘর তিনি সামলাবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু, পুজোর সময় এবার বাড়ি যেন গ্রাস করে নিয়েছে শোকের ছায়া।