দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে বন্যায় ভাসছে দক্ষিমবঙ্গের নানা জেলা। উত্তরবঙ্গের বহু জেলাও প্লাবিত। ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্যের মন্ত্রীদের বিশেষ নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে খবর, মন্ত্রীদের দুর্গাপুজোর চেয়ে বেশি বন্যার দিকে নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ভারী বৃষ্টি এবং ধসে অবস্থা বেহাল দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ির। তাই দুর্গাপুজোর থেকে জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে মহালয়ার দিন রাজ্যে দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। তাই নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সব জেলাকেই সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রীদের সতর্ক থাকার সঙ্গে দুর্গাপুজো যেন শান্তিতে কাটে সে বিষয়ে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথাই জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। মন্ত্রীদের বিশেষ নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, দুর্গাপুজোর পাশাপাশি বন্যাও গুরুত্বপূর্ণ। যে সমস্ত মন্ত্রীদের এলাকায় বন্যা হয়েছে সেখানে মন্ত্রীদের দুর্গাপুজোর চেয়ে বেশি বন্যায় নজর দিতে হবে। এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে তাঁদেরই। আর যেখানে বন্যা হয়নি, সেখানে এলাকার মন্ত্রীদের বন্যাকবলিত এলাকার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সংগ্রহ করে পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: পানিহাটি থেকে আসানসোল অভিযান চালাল এনআইএ, মাওবাদী যোগ থাকার অভিযোগ
অন্যদিকে রবিবার উত্তরবঙ্গে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সোমবার কলকাতায় ফিরে নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, সেখানে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের নিয়েও বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠক শেষে এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উৎসবের সময় আসছে। তাই প্রশাসনকে আরও সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। মহালয়ার দিন ভরা কোটাল আছে। ভরা কোটালের আশঙ্কা রয়েছে যেখানে, সেখানে তিন তারিখ পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝলে আগাম নিরাপদ জায়গায় মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী দক্ষিণবঙ্গের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম এবং দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ বণ্টন ও দুর্গাপুজোর নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেন, ‘ত্রাণ সামগ্রী কোনওভাবেই আটকে রাখা যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। আমার কাছে ত্রাণ নিয়ে যেন কোনও অভিযোগ না আসে। অনেক গরিব পরিবার রয়েছে। বন্যার জন্য জামাকাপড় কিনতে পারেননি। তাঁদের প্রয়োজনে জামাকাপড় দেবেন আপনারা। বন্যার জন্য কোনও দুর্গাপুজোর যদি সমস্যা হয়, তাহলে ক্লাবগুলিকে সহযোগিতা করতে হবে।’