নাগরিক পরিষেবা নিয়ে বাংলার শহুরে এলাকায় যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে সেটা উপলব্ধি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই দলের বিধায়ক–মন্ত্রী–পুরসভার চেয়ারম্যান–কাউন্সিলরদের তুলোধনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্নের বৈঠকে গর্জন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্যের কর্পোরেশন, পুরসভাগুলির কাজের গতি খতিয়ে দেখতেই জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যা ঘোষণা করেন বৈঠকের পর।
লোকসভা নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করলে বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যের পুরসভা এলাকা যেগুলি আছে সেখানে বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ১২৬টি পুরসভার মধ্যে ৭৬টি এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, জনপ্রতিনিধিদের মূল কাজই হল নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। সেটা না পারলে পদ আঁকড়ে থাকার যোগ্যতাই তাঁদের নেই। এবার সেই অকেজো পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের ছুঁড়ে ফেলার চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি লোকাল স্তরের হাতে থেকে টেন্ডার করার বিষয়টি তুলে নিচ্ছি। কোনও টেন্ডার আমি লোকালই করতে দেব না। সব সেন্ট্রালি হবে। আর সেন্ট্রালের হাতেই তথ্য থাকবে।’
এই কাজ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন। মুখ্যসচিবকে মাথায় রেখে এই কমিটি গড়ে দিয়েছেন তিনি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এই কমিটি করে দিচ্ছি যেখানে থাকবেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ভূমি সচিব, অর্থ সচিব এবং সেচ দফতরের সচিব। তার সঙ্গে থাকবে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, এডিজি আইনশৃঙ্খলা এবং ডিজি। এই কয়েকজনকে নিয়ে কমিটি তৈরি করে দিলাম। কোনও কিছু হলে আমি তাঁদের ধরব। কেন্দ্রীয় সরকার একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যেও আমাদের লোকেরা ভাবছে উনি তো ভুলে যাবেন। কোনও অফিসার এসে ভাবেন আমি তো দু’বছর থাকব। আমি কোনওরকম কাটিয়ে দিতে পারলেই হল। না তা হয় না। আপনি দু’বছর থাকলেও মনে রাখবেন আপনার পিরিয়ডটাও রিভিউ করা হবে। তাই রিভিউ কমিটি তৈরি করা হবে।’
আরও পড়ুন: সিভিক ভলান্টিয়ারদের দৈনিক মজুরি বাড়াল রাজ্য সরকার, বিজ্ঞপ্তি জারি করল নবান্ন
এছাড়া কলকাতায় দু’বছর আগে টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু শহরে হকার পুনর্বাসন নিয়ে শহরে তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অথচ নতুন করে হকার বসছে বলে অভিযোগ। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘এই রিভিউ কমিটিতে ভিজিল্যান্স এবং এসিবি–কে রাখা হবে। একইসঙ্গে সিআইডি’কে রাখা হবে। এডিজি ল’ অ্যান্ড অর্ডার থাকবে। ডিরেক্টরেট অফ সিকিউরিটিকেও থাকতে বলছি। লোকাল ট্যালেন্টেড ছেলে–মেয়েরা যারা কাজ করতে পারবে তাদের ইন্টার্ণশিপ নিয়ে কাজ করাতে হবে। আমরা তো একটা সুযোগ দিয়েছি আড়াই হাজার টাকা করে মাসে দিয়ে ১৫০০ ছেলে মেয়েকে আমরা নিচ্ছি। এই কাজে তাদের লাগান। তারা সমস্যাটা এসে যিনি হেডে থাকবেন তাঁকে জানাবে। প্রত্যেকদিন কাজ হচ্ছে কিনা তারা সুপারভাইস করবে।’