ম্যারাথন অপারেশন। অর্থাৎ একের পর এক অপারেশন করে তাক লাগিয়ে দেওয়া। এই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। এমনই নজির গড়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল। ১৫ জন চিকিৎসক মিলে মোট পাঁচদিনে ১৭৫ জন রোগীর গলব্লাডার অস্ত্রোপচার করেছেন। যার সব কটিই সফল তো বটেই, দেশের ইতিহাসেও এই ঘটনা নজিরবিহীন। সরকারি হাসপাতালের এই সাফল্যে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, শনিবার এক্স হ্যান্ডেলে এই খবর পোস্ট করে চিকিৎসকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে এই পাঁচদিনে ১৭৫টি অপারেশন করার অর্থ ১২০ ঘণ্টায় ১৭৫টি অস্ত্রোপচার। প্রত্যেকটি একেবারে নির্ভুল। একেবারে নিখুঁত। দেশের মধ্যে এভাবেই রেকর্ড গড়ল বাংলার এসএসকেএম হাসপাতাল। নানান জেলা থেকে গলব্লাডার স্টোনের রোগীরা এসেছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেনারেল সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অভিমন্যু বসু, অধ্যাপক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার–সহ শল্যচিকিৎসা বিভাগের একাধিক চিকিৎসক হাতে হাত মিলিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আমাদের নিজেদের সুপার স্পেশ্যালিটি সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম এক নতুন রেকর্ড গড়েছে! গত পাঁচদিনে অপেক্ষমাণ ১৭৫টি গলব্লাডার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।’
আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের পাতে দু’দিন সেদ্ধ ডিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্যের, মিড–ডে মিলে বড় পদক্ষেপ
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ছিল সরকারি ছুটি। সরকারি অন্যান্য পেশার কর্মচারীরা যখন ছুটি উপভোগ করেছেন তখন এসএসকেএম হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা একের পর এক অস্ত্রোপচার নির্ভুলভাবে করে চলেছেন। যা ভাবা যায় না। দেশের অন্যান্য রাজ্যের থেকে বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থা যে সত্যিই অনেকটা এগিয়ে তা আবার প্রমাণ করছে এই নয়া রেকর্ড। তাই মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘এটি ছিল একটি বিশেষ উদ্যোগ। যার মাধ্যমে অপেক্ষমাণ গলব্লাডার রোগীদের অস্ত্রোপচার দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, যদি আমাদের চিকিৎসকরা একসঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে কী অসাধ্য সাধন করা সম্ভব! সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অর্থাৎ এই পাঁচ দিনে আরও ৩৯০টি বড় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। যা এই বিশেষ উদ্যোগের বাইরে।’
এছাড়া এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে খবর, নানা কারণে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীর চেয়ে বেশি সংখ্যক রোগীর অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব নয়। সেই চাপ কমাতে চিকিৎসকরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা একাধিক অস্ত্রোপচারের করবেন। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ যাঁরা মাইক্রো সার্জারি কী জিনিস জানেনও না, নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়া তাঁদের কাছে স্বপ্ন সেইসব মানুষদেরই পিত্তথলির অস্ত্রোপচার হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। এই ঘটনার পর এসএসকেএম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীদের এই অনন্য সাফল্যের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা–অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা কাকে বলে সেটা সামনে তুলে ধরা হল।