উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলছেন বিজেপির বিধায়ক–সাংসদরা। অথচ উত্তরবঙ্গের সমস্যা নিয়ে যখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে তুললেন তখন তা শুনতে চাইলেন না প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি পুনর্নবীকরণ ইস্যুতে মোদী সরকারকে তুলোধনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া এবং বেল বাজিয়ে বক্তব্য থামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যেও যতটা বলা যায় বলেছেন বলে দাবি তাঁর।
কদিন আগে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গঙ্গা জলবন্টন চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রশ্ন তোলে, বাংলার সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে কেমন করে নরেন্দ্র মোদী এই ঘোষণা করলেন? এই বিষয়ে শনিবার নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘আপনি কোন দেশকে কী দেবেন বা দেবেন না তা নিয়ে কোনও কথা বলছি না। কিন্তু যে রাজ্য সরকার স্টেক হোল্ডার তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন না? তাঁদের সঙ্গে কনসাল্ট করবেন না? বাংলাদেশকে নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। অনেকে এটাকে নিয়ে মিস লিড করছে। এখানে তিনটি অংশীদার আছে— ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ এবং স্টেক হোল্ডার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে আমাদের কাউকে জিজ্ঞেস করলেন না?’
আরও পড়ুন: শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রমূর্তি বসিয়ে বিতর্কে বোলপুর পুরসভা, বন্ধ হয়ে গেল উন্মোচন অনুষ্ঠান
এই চুক্তির ফলে তিস্তার জল শুকিয়ে যাবে। গরমকালে উত্তরবঙ্গের মানুষ খাবার জল পর্যন্ত পাবে না। আর বর্ষাকালে উত্তরবঙ্গের বিস্তার্ণ অংশ জলের তলায় চলে যায়। ১৯৯৬ সালে যখন গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তখন ঠিক হয়েছিল, ২০২৬ সালে এই চুক্তি পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করে দেন, এই চুক্তি পুনর্নবীকরণ হতে চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘ফরাক্কা চুক্তি রিনিউ করলেন কিন্তু আমাদের জানালেন না। দেবগৌড়াজির সময়ে যখন ফরাক্কা চুক্তি প্রথমবার হয়, তখন এই চুক্তির বদলে ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাংলাকে দেওয়ার কথা ছিল। যাতে মুর্শিদাবাদ মালদায় যে ভাঙন হয় তা বন্ধ করতে কাজ করা যায়। ফরাক্কা শুকিয়ে গিয়েছে। কারণ কোনও ড্রেজিং হয় না। ক্যালকাটা পোর্টকেও শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’
এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইন্দো–ভুটান রিভার কমিশন গঠনের পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ভুটান থেকে যে নদীগুলি নেমে এসেছে তাতে নজরদারি করার জন্য কমিশন গঠনের কথা বলেছে রাজ্য সরকার। এই কমিশন গঠনের দাবিতে শুক্রবার বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ইন্দো–ভুটান রিভার কমিশন করার কথা বলেছি। কারণ ভুটান থেকে যে জল আসে তাতে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ডুবে যায়। এই বিষয়টি দেখা উচিত। ডিভিসি শুকিয়ে যাচ্ছে। ১২ বছর ড্রেজিং হয়নি। ফলে অল্প বৃষ্টিতে বন্যা হচ্ছে বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলিতে। এগুলি তো দেখতে হবে।’