ম্যানহোল কাণ্ডে তিনজন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় তড়িঘড়ি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গড়ে দিয়েছেন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি। ঠিকাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর কেএমডিএ বানতলা চর্মনগরীতে পাইপলাইনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে এবার একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় ফিরহাদ হাকিম নিহত শ্রমিক পরিবারপিছু ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও কেন এমন ঘটনা ঘটল? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হল মন্ত্রীদের।
এখানেই শেষ নয়, আজ মঙ্গলবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। সেখানেই ম্যানহোল কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভর্ৎসনা করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীকে। এই দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান। জাভেদ খানকে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘এসব হলে আমি তোমাদের অ্যাসোসিয়েশন ভেঙে দেব।’ আর তারপরই কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দেন গোটা বিষয়টি দেখে নিতে। এই ঘটনায় বেশ চাপে পড়ে যান জাভেদ সাহেব। কোনও যুক্তি দেননি। মাথানিচু করে ছিলেন বলে সূত্রের খবর। রবিবার কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে সেক্টর ৬ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অধীনে সাফাইয়ের কাজ চলছিল। ট্যানারির বর্জ্য পরিষ্কার করতে গিয়ে সাফাইকর্মীরা ম্যানহোলে নামেন। আর সেখানেই তিনজন তলিয়ে গিয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন: এবার পান–গুটকার পিক ফেলে নোংরা করলে বড় অঙ্কের ফাইন, বিল আনছে মমতার সরকার
এই ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর কানেও পৌঁছেছে। তারপর তিনি নিজে খোঁজ নিয়েছেন। সেখানে যে তথ্য তাঁর হাতে উঠে এসেছে তার জেরেই মন্ত্রী জাভেদ খানকে কড়া ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। তিন সাফাইকর্মী ফরজেম শেখ, হাসি শেখ এবং সুমন সর্দার মারা গিয়েছেন। তারপর নানা পদক্ষেপ করা হলেও এসব মুখ্যমন্ত্রী যে বরদাস্ত করবেন তা কড়া ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রায় ১০ ফুট গভীর ম্যানহোলে কেন নামতে হল তিনজন শ্রমিককে? এই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে পিন পড়ার নীরবতা বিরাজ করছিল। একসঙ্গে তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। সেটাও জানান তিনি।
ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে পরিষ্কারের ব্যবস্থাকে ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ করে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল, ম্যানহোল সাফাই, মলমূত্র সাফাই–সহ নানা কাজ কোনও মানুষকে দিয়ে করানো যাবে না। এমনকী পরিস্থিতি বিশেষে কাউকে ম্যানহোলে নামাতে হলে সাফাইকর্মীর জীবন এবং স্বাস্থ্যের সবরকম নিরাপত্তাও দিতে হবে। সেখানে এবার সেসব মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে নামানোর আগে সংশ্লিষ্ট কর্মীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিশেষ অ্যাপ্রনে ঢেকে রাখার কথাও মানা হয়নি বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে এসবের কোনও কিছুই মানা হয়নি কেন? তাও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী বলে সূত্রের খবর।