নাগরিক পরিষেবা নিয়ে বাংলার শহুরে এলাকায় যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে সেটা উপলব্ধি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই দলের বিধায়ক–মন্ত্রী–পুরসভার চেয়ারম্যান–কাউন্সিলরদের তুলোধনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্নের বৈঠকে গর্জন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্যের কর্পোরেশন, পুরসভাগুলির কাজের গতি খতিয়ে দেখতেই জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এমন রণংদেহী মেজাজ কেন দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও নেপথ্যে আছে একাধিক চাঞ্চল্যকর খবর।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকদের সঙ্গে নীরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখতে খুলে ছিলেন ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ কর্মসূচি। এটা গোটা রাজ্যে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা নেতা–মন্ত্রীরা বুঝতে পারেননি। কিন্তু সূত্রের খবর, এখানেই ফোন করে একাধিক জেলা এবং কলকাতা শহরের বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ জানান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার অভিযোগ শুনে সেগুলি লিখে রাখেন। আর তারপর শীর্ষ পুলিশ অফিসারদের নিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। তখন যে তথ্য উঠে আসে তা আরও চাঞ্চল্যকর। তবে মুখ্যমন্ত্রী সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। হাতে সমস্ত প্রমাণ নিয়েই এবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন। কারণ নাম খারাপ কোনও নেতা–মন্ত্রীর হচ্ছে না। বরং হচ্ছে দলের—তৃণমূল কংগ্রেস।
লোকসভা নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করলে বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যের পুরসভা এলাকায় বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ১২৬টি পুরসভার মধ্যে ৭৬টি এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের মূল কাজই হল নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। সেটা না পারলে পদ আঁকড়ে থাকার যোগ্যতাই আপনাদের নেই।’ এবার অকেজো পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের ছুঁড়ে ফেলার চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ অভিষেক বারবারই মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, অসাধু লোকজন নিয়ে তিনি কাজ করবেন না। এতে দলের এবং মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম হচ্ছে। কাদের সরাতে হবে তা নিয়ে একটি তালিকাও মুখ্যমন্ত্রীকে দেন অভিষেক বলে সূত্রের খবর। এবার হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন দলে চলবে ‘অভিষেক মডেলই’। আবার এভাবে অভিষেককেও বার্তা দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চলন্ত দুন এক্সপ্রেসে দুষ্কৃতী হামলা, লাঠির আঘাতে মাথা ফাটল যাত্রীদের, আলোড়ন তুঙ্গে
মুখ্যমন্ত্রী কারও নাম নিয়েছেন। আবার কারও নাম নেননি। কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর টার্গেট কারা। যার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আগে আমি এসব সাফ করব। তারপর আমি নির্বাচনে যাব। হাওড়ায় চারজন বিধায়ক থাকলেও কেন নাগরিক পরিষেবা পৌঁছচ্ছে না? সুজিত বসু কম্পিটিশন করে সল্টলেক–রাজারহাটে বাইরের লোক বসিয়ে দিচ্ছেন। কাউন্সিলররা কাজ করছেন না। পুলিশও টাকা নিয়ে হকার বসাচ্ছে। আগে সাফ করব। তারপর ভোট হবে হাওড়া–বালিতে।’ অর্থাৎ যে পুরসভাগুলিতে নির্বাচন বাকি সেটা করার আগে স্বচ্ছতা আনতে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার সঙ্গে আছে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনও। যাঁরা টার্গেট হয়ে গেলেন তাঁদের টিকিট পাওয়াটা একটু চাপের। সেই বার্তাও দেন মুখ্যমন্ত্রী।