কিছুদিন আগে হাজিরা খাতায় সই করেই অন্যত্র চলে যেতেন তাঁরা। এমনকী উপস্থিত থাকলেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতেন। একেবারে স্পিকটি নট থাকতেন তাঁরা। অথচ মোটা টাকার ভাতা এবং অন্যান্য পরিষেবায় মজেছিলেন। এই বিষয়টি নজরে আসতেই পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনেন। তাতে কড়া ফরমান জারি হয়। আর এবার তা অচিরেই মিটে গেল। হ্যাঁ, এই অবস্থা হয়েছিল বিধানসভায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কদের। এখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ২২০ থেকে বেশি। অথচ তার মধ্যে শতাধিক বিধায়ক আছেন, যাঁদের বিধানসভার অলিন্দে নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায় বলে অভিযোগ।
এই অভিযোগ পৌঁছে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দুয়ারে। তারপরই অ্যাকশন স্টার্ট। শুরু হয়ে যায় দলের ক্লাস। বিধানসভায় অংশ নিতে হবে। সমস্ত বিধায়কদের থাকতে হবে যতক্ষণ অধিবেশন চলবে। সই করে চলে যাওয়া যাবে না। আবার অধিবেশন কক্ষে এসে চুপ করে বসে থাকা যাবে না। এমনই ফরমান জারি হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। আর তার পরই তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের তৎপরতার নজির মিলল বিধানসভায়। অবশেষে আজ বিধানসভায় মৌনতা ভাঙলেন বেশ কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক। আজ, সোমবার রাজ্যপালের বাজেট ভাষণের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অধিবেশন কক্ষে বক্তব্য রাখলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে মর্টার শেল, শিলিগুড়িতে তীব্র আতঙ্ক
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি নীরব বিধায়কদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছিল বলে সূত্রের খবর। এই আবহে তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট নীরব বিধায়কদের সতর্ক করা হয়েছিল। তারই ফলস্বরূপ, রাজ্যপালের ভাষনের উপর আজ আলোচনায় অংশ নিতে দেখা গেল এমন ৯ জন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ককে। বিশেষ করে যাঁদের আগে কখনও বিধানসভায় বক্তৃতা রাখতে দেখা যায়নি। বিধায়করা তাঁদের এলাকার সমস্যা–সহ নানা বিষয় নিয়ে বিধানসভার বক্তব্য রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রেকর্ড বলছে, অধিকাংশ তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক বিগত তিন বছরে একবারও বিধানসভার অধিবেশনে কোনও প্রশ্নও করেননি, আলোচনাতে অংশ নেননি।
এবার একসঙ্গে প্রায় ৯ জন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কের নাম রয়েছে বক্তার তালিকায়। যাঁরা এই প্রথম অধিবেশন কক্ষে বক্তব্য রাখলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন সদ্য জয়ী বিধায়কও আছেন। পুরনোও আছেন। বিধানসভা সূত্রে খবর, এই বিধায়করা হলেন, নৈহাটির সনৎ দে, তালডাংড়ার ফাল্গুনী সিংহবাবু, মধুপর্ণা ঠাকুর, করবী মান্না, অরিন্দম গুঁইন, মুকুটমনি অধিকারী, শেখ রবিউল ইসলাম, সঙ্গীতা রায় এবং মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা। এটা দেখে প্রধান বিরোধী দলের বিধায়করা বলছেন, দিদিমনি রেগে যেতেই বাধ্য ছাত্রের মতো বিধায়করা পড়া বলতে শুরু করেছেন।