জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে রাজ্যের বরাদ্দ মেটাচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে যাতে প্রকল্পের কাজ করা যায়, মরিয়াভাবে সেই চেষ্টা চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সংশ্লিষ্ট খাতে যাতে বিশ্বব্যাঙ্ক রাজ্যকে ঋণ দিতে রাজি হয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগ ও আলোচনা শুরু হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি অনুসারে, সেই বৈঠক প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক হয়েছে। তবে, তার মানে এই নয় যে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে সহজেই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে ঋণ পাওয়া যাবে।
কারণ, নিয়ম অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যস্থতা ছাড়া রাজ্যগুলিকে সরাসরি ঋণ দেয় না বিশ্বব্যাঙ্ক। বস্তুত, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অনেকটা গ্যারান্টারের মতো কাজ করে।
ধরা যাক, কোনও প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ঋণ চাইছে। বিশ্বব্যাঙ্ক আগে খতিয়ে দেখবে, তাদের দেওয়া টাকায় সেই প্রকল্প রূপায়িত হলে তা থেকে কতটা উপকার পাওয়া যাবে।
এবং এক্ষেত্রে কেন্দ্রকেও বলতে হবে যে বিশ্বব্যাঙ্ক যদি ওই টাকা দেয়, তাহলে তার সুফল অবশ্যই মিলবে। কেন্দ্রের তরফে এহেন নিশ্চয়তা দেওয়া হলে তবেই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, এর আগে রাজ্য সরকারের সেচ দফতরকে নদীপথ সংস্কার সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অধীনে ঋণ দিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যতটা সহজে তার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে তাদের সেই ভূমিকায় আদৌ দেখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ব্র্যান্ডিং বা নামকরণ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েন নতুন নয়। রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের অভিযোগ, তাদের প্রকল্পের নাম বদলে নিজেদের বলে চালাচ্ছে রাজ্য।
পালটা রাজ্যের যুক্তি, যেখানে প্রকল্প রূপায়ণের অধিকাংশ টাকা স্থানীয় প্রাদেশিক সরকার দিচ্ছে, সেখানে কেন শুধুমাত্র কেন্দ্রের দেওয়া নামেই প্রকল্প কার্যকর করা হবে?
সূত্রের দাবি, এই টানাপোড়েনের জেরেই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে রাজ্যের বরাদ্দ অর্থ আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, গত জুলাই-অগস্ট মাসে স্বাস্থ্য খাতে রাজ্যকে শর্তসাপেক্ষে প্রায় ৩২৭ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও সেই টাকা আদতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বরাদ্দ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের টাকা সেই বছর মেটায়নি কেন্দ্র।
কাজেই আগামী দিনে কেন্দ্র এই খাতে রাজ্যের বরাদ্দ আদৌ মেটাবে কিনা, অথবা বিশ্বব্যাঙ্ককে এই খাতে রাজ্য সরকারের ঋণ দেওয়ার জন্য সবুজ সঙ্কেত দেবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।