‘আমরা মেয়ের বিচার চাই, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না’ - আরজি কর মামলার শাস্তি ঘোষণার পরে এমনই মন্তব্য করল নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবার। সোমবার শিয়ালদা আদালতের বিচারক জানান যে এই ঘটনাকে তিনি ‘বিরল থেকে বিরলতম’ অপরাধ বলে মনে করছেন না। তাই অপরাধী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন যে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। সেই টাকা দেবে ‘রাষ্ট্র’।
বিচারকের সেই নির্দেশের পরে আদালতকক্ষেই নির্যাতিতার বাবা-মা জানান, তাঁদের ক্ষতিপূরণ লাগবে না। তাঁরা মেয়ের বিচার চান। তখন শিয়ালদা আদালতের বিচারক জানান, আইনের যা নিয়ম আছে, সেটা মেনেই তিনি পদক্ষেপ করছেন। সেইমতো আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। সেটা গ্রহণ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে।
টাকা দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করা হচ্ছে না, বলল আদালত
শিয়ালদা আদালতের বিচারক আরও জানান, যেভাবে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, সেটার কখনও ক্ষতিপূরণ হয় না। বাবা ও মা যেন না ভাবেন যে টাকা দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব হল সরকারের। এটা জরিমানা করা হয়েছে।
আরজি কর মামলা কোন পথে এগিয়েছে?
৯ অগস্ট, ২০২৪: আরজি জর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
১০ অগস্ট, ২০২৪: সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। সঞ্জয়কে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে কলকাতা পুলিশ।
১৩ অগস্ট, ২০২৪: কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার কেড়ে নেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
১১ নভেম্বর, ২০২৪: শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
৯ জানুয়ারি, ২০২৫: আরজি কর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।
১৮ জানুয়ারি, ২০২৫: সঞ্জয় রায়কে দোষীসাব্যস্ত করেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক।
২০ জানুয়ারি, ২০২৫: সাজা ঘোষণা করল শিয়ালদা আদালত। সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Mamata on RG Kar verdict: এই নরপিশাচদের বাঁচার অধিকার নেই, আমাদের হাতে থাকলে ফাঁসির সাজা করিয়ে দিতাম
কী কী সাজা দেওয়া হল সঞ্জয়কে?
আইনজীবী জানিয়েছেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ) ধারায় সঞ্জয়কে যাবজ্জীবনের সাজা দেওয়া হয়েছে। ৬৬ ধারায় (ধর্ষণের এমন আঘাত করা, যে কারণে মৃত্যু হতে পারে) দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড। ১০৩ (১) ধারায় (খুন) ধারায় যাবজ্জীবনের সাজা দিয়েছে আদালত। তিনটি ধারায় জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের জেল হবে। আর নির্যাতিতার পরিবারকে সাত লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।