সঞ্জয় রায়ের প্রতি আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা অত্যন্ত স্নেহশীল হয়ে উঠছেন। এমনই দাবি করলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি দাবি করেছেন, যেভাবে মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সঞ্জয়ের প্রতি 'স্নেহশীল' হয়ে উঠছেন বাবা-মা, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে বন্দী থাকা কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ারের জন্য কম্বল, কমলালেবু, আপেল পাঠালেও অবাক হবেন না। কুণালের কথায়, 'তাঁরা যেভাবে সঞ্জয়ের প্রতি স্নেহশীল হয়ে উঠছেন, যে ব্যক্তি তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ ও খুন করেছে, তার প্রতি (যেভাবে স্নেহশীল হয়ে উঠছেন), তাতে দু'দিন বাদে দেখব যে প্রেসিডেন্সি জেলে সঞ্জয়ের সেলে কম্বল আর শীতবস্ত্র পাঠাচ্ছেন। কখনও দেখব যে জেলে আপেল, কমলালেবু এসব পাঠাচ্ছেন সঞ্জয়ের শরীর ভালো রাখার জন্য। তাঁরা যেভাবে সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, (তাতে) এর পিছনে বড় রহস্য আছে।'
কুণাল দাবি করেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা'কে অসম্মান করছেন না। কিন্তু তাঁরা এখন রাজনৈতিক মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন বলে দাবি করেন কুণাল। তাঁর কথায়, 'আমি খুব স্পষ্টভাবে বলছি, আমি অভয়ার (নির্যাতিতা চিকিৎসক) বাবা-মা'কে শ্রদ্ধা করি। তাঁর প্রতি পূর্ণ সহমর্মিতা আছে। কিন্তু তাঁরা যদি এভাবে ঘনঘন (বয়ান) পালটাতে থাকেন, (তাহলে আমাদের মুখ খুলতে হবে)।'
তৃণমূল নেতা আরও বলেন, ‘(তাঁরা) প্রথমে বললেন পুলিশ। তারপর কোর্টে গিয়ে বললেন যে সিবিআই চাই। তারপর বললেন যে তাঁদের সিবিআই চাই না। নিম্ন আদালতের উপরে তাঁদের আস্থা নেই। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টকে বিশ্বাস করবেন না। তাঁরা কলকাতা পুলিশকে বিশ্বাস করবেন না। তাঁরা সিবিআইকে বিশ্বাস করবেন না।’
‘আবেগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে দিচ্ছেন’, নিশানা কুণালের
কুণালের অভিযোগ, নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মায়ের যে আবেগ আছে, সেটাকে তাঁরা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছেন। মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার আড়ালে তাঁরা যদি রাজনৈতিকভাবে কড়া মন্তব্য করেন, তাহলে সেটার উত্তর রাজনৈতিকভাবেই দেওয়া হবে বলে দাবি করেন কুণাল।
‘কোন বাবা-মা বলেন যে মেয়ের ধর্ষক-খুনির ফাঁসি চাই না’, তোপ কুণালের
তৃণমূল নেতার কথায়, ‘আমরা বলছি তো বাম, অতিবাম, বিজেপি, অন্ধ তৃণমূল বিরোধীদের শেখানো কথাগুলো তাঁরা ধাপে, ধাপে, ধাপে বলছেন। তাঁদের মনে আবেগ আছে। তাঁদের কষ্ট আছে। আমি তো বারবার বলছি। তাঁদের বুকে আগুন জ্বলছে। তাঁদের মেয়ে এভাবে মারা গিয়েছেন। কিন্তু কোন বাবা-মা বলুন তো (এরকম বলেন যে) মেয়ের ধর্ষক ও খুনির ফাঁসি চাই না? এটা হতে পারে কখনও? এটা তো সিপিআইএমের লাইন।’
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টে এখনই সঞ্জয়ের ফাঁসি চায়নি পরিবার। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই ফাঁসি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দাবি, বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ করেছে। তাই তার ফাঁসি হওয়া উচিত। যদিও পরিবারের তরফে এখনই সঞ্জয়ের ফাঁসি চাওয়া হয়নি। আর সেই বিষয়টি তুলে ধরে পরিবারকে আক্রমণ শানিয়েছেন কুণাল।
তৃণমূল নেতাদের নিশানায় নির্যাতিতার পরিবার
আর নির্যাতিতার পরিবারকে কুণালদের সেই আক্রমণের পালা শুরু হয়েছে তরুণী চিকিৎসকের বাবার একটি মন্তব্যের পরে। দিনকয়েক আগে তিনি দাবি করেছিলেন যে মেয়ের মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিতে হবে। করতে হবে পদত্যাগ। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই তাঁর মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এখনও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা। তারপর থেকেই কুণাল, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল নেতারা নিশানা করেছেন নির্যাতিতার পরিবারকে।