গড়িয়া শ্মশানে মর্গ থেকে বিকৃত দেহ টেনে বের করে ভ্যানে তোলার ভিডিয়ো নিয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে টুইটারে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রশাসনকে রেয়াত করল না বিরোধী বিজেপিও।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া এক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, চিমটের সাহায্যে বিকৃত দেহ টেনে বের করে ভ্যানে তুলছেন মর্গকর্মী। স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেহটি দাহ করতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। তাঁরাই ভিডিয়ো তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মৃতের প্রতি প্রশাসনিক অসম্মানের অভিযোগ করেন। ওই ভ্যানে আরও কয়েকটি দেহ ছিল, যাদের থেকে এলাকায় অসহ্য দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল বলে তাঁদের দাবি।
বিজেপি এবং বামেদের অভিযোগ, দেহগুলি করোনা সংক্রমণে মৃত ব্যক্তিদের। কলকাতা পুর নিগমের তরফে অবশ্য নথিপত্র পেশ করে সাফাই গাওয়া হয় যে, হাসপাতালে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ দেহ দাহ করার জন্য গড়িয়া শ্মশানকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নিগমের যুক্তি, ধাপায় যে হেতু শুধুমাত্র করোনায় মৃত হিন্দু দেহ সৎকার করার রীতি চালু রয়েছে, সেই কারণে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বেওয়ারিশ দেহ সৎকারের জন্য গড়িয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই মর্মে গত ২৯ এক নির্দেশনামা পাশ করেন কেএমসি-র প্রধান স্বাস্থ্য আধিকারিক। নথিপত্রগুলি হিন্দুস্তান টাইমসের গোচরে এসেছে।
রাজ্য সরকারের এ হেন অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার টুইটারে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মন্তব্য করেন, ‘অবর্ণনীয় হৃদয়হীন অসংবেদনশীলতার সঙ্গে মৃতদেহ সৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের আচরণ দেখে শোকার্ত বোধ করছি। সংবেদনশীলতার কারণে ভিডিয়ো শেয়ার করলাম না। পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিবের থেকে এই বিষয়ে জরুরি আপডেট চেয়ে পাঠিয়েছি। আমাদের সমাজে পরম্পরা অনুযায়ী মৃতদেহকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।’
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘সরকার সত্যি লুকোনোর চেষ্টা করছিল। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, দেহগুলি অ্যাসিডে পোড়ানো হয়েছিল।’
সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখে দেহগুলির নাম-ঠিকানা জানতে চেয়েছেন।
মেয়র জানিয়েছেন, দেহগুলি বেওয়ারিশ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের মর্গে পড়েছিল। তিনি জানান, ‘গত ২৯ মে কেএমসি এক নির্দেশে জানিয়েছে, বেওয়ারিশ দেহ গড়িয়া শ্মশানে দাহ করা হবে এবং ধাপার শ্মশানে শুধুমাত্র Covid-19 এ মৃত হিন্দুদের দেহল সৎকার করা হবে।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অদ্যাপক শৈবাল মুখোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, আলোচ্য দেহগুলি বিভিন্ন থানায় নথিভুক্ত মামলায় জড়িত এবং তাঁদের কারও করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়নি। তাঁর দাবি, ‘ভিডিয়োয় প্রদর্শিত বিষয়টি আগাগোড়া ভুয়ো।’
তবে এত কিছু সত্ত্বেও শুক্রবার মৃতদেহের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ ঘিরে বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়া যায়নি।
এ দিন সকালে রাজ্যপাল ফের টুইট করেন, ‘দেহগুলি করোনা রোগীদের কি না, সেটা বিচার্য নয়। কথা হচ্ছে, কী ভাবে মানুষের দেহ এমন নির্লজ্জ ভাবে টেনে বের করা হয়! পশুর চেয়েও অধম আচরণ করা হয়েছে। যাঁরা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বলছি- নিজের অন্তরাত্মা ও বিবেক তল্লাশি করে দেখুন এবং ভাবুন ওই দেহ আপনারই কোনও আত্মীয়ের!’
পরের টুইটে ধনখড় লিখেছেন, ‘স্বরাষ্ট্র সচিবের জবাব এসেছে। মৃতদেহের প্রতি গাফিলতির স্বীকারোক্তি এবং সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নজরে থাকবে। এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনে দোষীদের গ্রেফতারের বদলে যাঁরা বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন, তাঁদের শিক্ষা দিতে পুলিশকে অপব্যবহার করা হচ্ছে।’