বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ বাজেটে রাজ্যবাসীর মন জয়ের চেষ্টা করল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। নানা জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে ভোটব্যাঙ্ক আরও মজবুত করতে নামল তারা। যদিও আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সঙ্গে তাঁর দাবি, রাজ্যের GDP ১০.৪ শতাংশ।
সোমবার রাজ্য বিধানসভায় ২০২০ – ২০২১ অর্থবর্ষের সাধারণ বাজেট পেশ করেন অমিত মিত্র ৩৮ মিনিটের বাজেট ভাষণ শুরু করেন কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে। দেশের অর্থনীতি ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন কোথায় গেল ‘আচ্ছে দিন’?
এদিন অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বেকারত্বের হার কমেছে ৪০ শতাংশ। এজন্য MSME-র সাফল্যকে কারণ হিসাবে তুলে ধরেন তিনি। সঙ্গে কর সংগ্রহের জন্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেন তিনি। যাতে বকেয়া কর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শোধ করলে বিপুল ছাড় ঘোষণা করেন তিনি। সঙ্গে বলেন, তাড়াহুড়ো করে GST চালু করায় এখনো ভুগছে রাজ্যগুলি।
তপশিলি জাতি ও উপজাতির প্রবীণদের জন্য বিশেষ পেনশন প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে। তপশিলী জাতির জন্য প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বন্ধু’। উপজাতির জন্য প্রকল্পের নাম ‘জয় জোহর’। এই প্রকল্পে অন্য কোনও পেনশন পান না এমন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা মাসে ১,০০০ টাকা ভাতা পাবেন। এক্ষেত্রে আয়ের কোনও ঊর্ধসীমা নেই।
এছাড়া রাজ্যে ৩টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। ঝাড়গ্রামে তৈরি হবে বিরসা মুন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া তপশিলিদের জন্য তৈরি হবে আম্মেদকর বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় নামে তৈরি হবে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজ্যের মানুষের কাছে সরকারি প্রকল্প পৌছে দিতে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ২,০০০-এর বেশি বাংলা সহায়তা কেন্দ্র খোলা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মহকুমা শাসকের করণ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছড়িয়ে থাকবে এই কেন্দ্রগুলি।
অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, রাজ্যের কৃষকদের আয় তিন গুণ করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের বহরও ৩ গুণ বেড়েছে বলে পরে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
চা বাগানের জন্য একাধিক ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। চা শিল্পে কৃষি আয়কর মকুব করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়া ‘চা সুন্দরী’ নামে একটি প্রকল্প অর্থমন্ত্রী। তাতে চা বাগানের শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি। এজন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চা বাগানে পর্যটনের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ প্রকল্পও একেবারে বিনামূল্যে দেবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতদিন এই প্রকল্পে মাসে ২৫ টাকা করে দিতে হত উপভোক্তাকে। মাসে ৩০ টাকা করে দিত রাজ্য সরকার। এবার থেকে গোটা টাকাটাই দেবে রাজ্য সরকার।
এছাড়া ‘হাসির আলো’ প্রকল্পে ৩ মাসে ৭৫ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ খরচ হয় এমন পরিবারের বিদ্যুৎ বিল সম্পূর্ণ মকুব করা হয়েছে।
গত আর্থিক বছরে রাজ্যে ৯.১১ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতা শেষে বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলার সরকার মানুষের সঙ্গে সব সময় ছিল, আছে ও থাকবে। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই মানুষের দুঃখ দূর করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তাঁরা। তবে কেন্দ্রের কাছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।