পশ্চিমবঙ্গে করোনভাইরাসে মৃত্যুর সংজ্ঞা ঠিক করতে ৩৪টি তথ্য অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক হল। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সন্তোষজনক না হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলেও তাঁর মৃত্যুর কারণ ওই ভাইরাসের সংক্রমণ বলে গ্রাহ্য করবে না সরকার। গত বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় সমস্ত মৃত্যুর কারণ ওই সংক্রমণই তা মানতে অস্বীকার করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, ডেঙ্গির মতো COVID 19-এ মৃত্যু কমিয়ে দেখাতে এসব ফন্দি এঁটেছে তৃণমূল সরকার।
রাজ্যে বেসরকারিভাবে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১১। যদিও সরকারি তথ্য অনুসারে সংখ্যাটি মাত্র ৩। বাকিদের মৃত্যু করোনা সংক্রমিত অবস্থায় হলেও তাদের মৃত্যুর জন্য কখনো কিডনির সমস্যা, কখনো নিউমোনিয়া আবার কখনো ডায়াবেটিসকে দায়ী করা হয়েছে। কার মৃত্যু করোনায় হয়েছে আর কার মৃত্যুর কারণ অন্য, তা ঠিক করতে রবিবার ৫ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, করোনা আক্রান্ত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে তার চিকিৎসার নথি ও সঙ্গে ৩৪টি প্রশ্নের উত্তর পাঠাতে হবে ওই কমিটির কাছে। তার পর কমিটি খতিয়ে দেখে ঘোষণা করবে সেই ব্যক্তির করোনায় মৃত্যু হয়েছে কি না।
এই ৩৪টি প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে, মৃত ব্যক্তি আগে থেকে কোনও রোগে আক্রান্ত ছিলেন কি না? মৃতের দীর্ঘমেয়াদি কোনও শারীরিক জটিলতা রয়েছে কি না? মৃতের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক ছিল কি না? ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন কি না? মৃত ব্যক্তি ফুসফুস সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার শিকার কি না ইত্যাদি।
এছাড়া রোগী কবে থেকে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন? তিনি বিদেশে বা ভিনরাজ্যে ভ্রমণ করেছিলেন কি না? করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার আগে জ্বরের কী চিকিৎসা হয়েছে তারও বিস্তারিত জানাতে হবে কমিটিকে।
বিরোধীদের দাবি, করোনায় মৃতের সংখ্যা কম করে দেখাতে এই সব পন্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণের সময়ও একই রকম অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে সরকারের এই নীতির সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। যিনি নিজে আবার পেশায় একজন চিকিৎসক।