করোনা সংক্রমণ রুখতে পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস–সহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তদন্ত। আর এই কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করেই শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
শুক্রবার রাজ্যপাল টুইট করে অভিযোগ জানিয়েছেন, এই করোনা মহামারী চলাকালীন জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে আরও গুরুতর অভিযোগ এনে জগদীপ ধনখড় টুইটে লিখেছেন, ‘যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তা সত্যকে আড়াল করার প্রচেষ্টা মাত্র। কেবলমাত্র স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত অপরাধীদের ধরতে পারবে।’
রাজ্যপাল টুইটে আরও লিখেছেন, ‘কেনাকাটার কাটমানি কোথায় গেল? কে বা কারা লাভবান হলেন— সেটা খুঁজে বের করাই তদন্তের একমাত্র কাজ হওয়া উচিত। চিকিৎসা সরঞ্জাম কোথা থেকে কেনা হয়েছে, কারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ হোক।’ শেষে তিনি লিখেছেন, ‘স্বচ্ছতার অভাবেই দুর্নীতি জন্ম।’
যদিও ইতিমধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে তাঁরা প্রধান সচিবকে একটি রিপোর্ট জমা দেবেন।
এ ব্যাপারে আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক আধিকারিক জানান, মহামারী মোকাবিলার জন্য গত কয়েক মাসে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ বহু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনেছে। আর তাতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই লেনদেনের ব্যাপারেই দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্যপালের এই অভিযোগের কথা জানতে পেরে তৃণমূল নেতৃত্ব পরিষ্কার জানিয়েছে, যদি তাঁর কাছে এই দুর্নীতির প্রমাণ থেকেই থাকে তবে তাঁর উচিত জনসমক্ষে বিবৃতি দেওয়া। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘রাজ্যপাল যা অভিযোগ করছেন তা কি তিনি প্রমাণ করতে পারবেন? তাঁর এই বেপরোয়া বক্তব্যগুলি আসলে তিনি যে পদে রয়েছেন তার মর্যাদা কমিয়ে দিচ্ছে।’
মূলত রাজ্যের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে থাকে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড নামে এক সংস্থা। রাজ্য সরকারের অধীন এই সংস্থা সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনে এবং এতে অনেকটা সময় লাগে। করোনা আবহে যাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ পাওয়া যায় তাই সরকার আলাদা একটি কমিটি গঠন করে।
সরকারি ওই আধিকারিক আরও জানান, নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু নির্দিষ্ট এজেন্সি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা–সহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে, পণ্যগুলির গুণমানও নিকৃষ্ট ছিল। কিছুদিন আগে এই কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছোয়। পরে তিনি এ বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এর পরই অভিযোগগুলি তদন্ত করে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।