রাজনীতির আঙিনা ছেড়ে এবার ব্যক্তিগত পরিসরেও ঢুকে পড়ল রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের জেরে তাঁকে ‘বিকৃতমনস্ক’ বলে সম্বোধন ধনখড়ের।
গত ১৫ জানুয়ারি বাংলা টিভি চ্যানেলের এক সাক্ষাত্কারে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে জনসংযোগ অভিযানে বাংলায় এসেছেন ধনখড়। সরকারি অনুষ্ঠানেও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে উনি হাজির হন। আপনারা কখনও তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, কেন এমন করেন? আগেও কত জন রাজ্যপাল এসেছেন। কখনও দেখিনি গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী, এম কে নারায়ণন বা কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে এমন কাজ করতে।’
তবে সেই সঙ্গে পার্থ জানান, ব্যক্তিগত ভাবে রাজ্যপাল ও তাঁর স্ত্রীকে তিনি শ্রদ্ধাও করেন।
শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যকে ব্যক্তিগত ‘অনভিপ্রেত’ বলে বর্ণনা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ওই মন্তব্য ‘ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে পরক্ষে উস্কানিমূলক’ বলেও জানান ধনখড়। শুধু তাই নয়, তা ‘এক বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেয় যা কখনই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়’ বলেও মন্তব্য করেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: আমার নাম শুনলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন উপাচার্যরা, কটাক্ষ রাজ্যপালের
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘ব্যক্তিগত ভাবে ওঁর প্রতি আমার আবেদন, দয়া করে চিন্তাভাবনা করে কথা বলুন। এগুলি বিপজ্জনক এলাকা। আমি নিশ্চিত এর জন্য উনি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবেন এবং বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়বে।’
ধনখড় আরও বলেন, ‘একজন বর্ষীয়ান মন্ত্রী এবং তৃণমূল দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা হয়ে রাজ্যের ফার্স্ট লেডি সম্পর্কে তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আর্জি, বিষয়টি খতিয়ে দেখুন। আপত্তি এখানে ত্রিস্তরীয়। প্রথমত, ফার্স্ট লেডি জনসংযোগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। দ্বিতীয়ত, এই মন্তব্য সংবিধানবিরোধী। তৃতীয়ত, ফার্স্ট লেডিকে সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যাওয়া। এই তিন অভিযোগ সম্পর্কেই বলা যায় যে মন্ত্রীমশাই সাংঘাতিক ভুল করেছেন। এই সমস্ত ধারণা ওঁর বিকৃত চিন্তার ফসল। ওঁকে বিষয়টি গভীর ভাবে ভেবে দেখতে হবে।’
একই সঙ্গে রাজ্যপাল জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন মহিলা। বিষয়টির স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে তাঁর জানা দরকার। এই সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠান বলতে একমাত্র সংবিধান দিবসে আমার স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিধানসভার মাননীয় অধ্যক্ষ। আমন্ত্রণ জানালে তবেই কোথাও যান ফার্স্ট লেডি। আমন্ত্রণ না পেলে তিনি যান না।’
রাজ্যপাল মনে করিয়ে দেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় আমার পাশে তাঁর আসন রাখা হলেও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি ফার্স্ট লেডি। ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্য জীবনে তিনি সর্বদা উঁচু মানের আচরণ করে থাকেন। এই মন্তব্য ওঁর বিরুদ্ধে অপমানজনক। মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টি দেখা উচিত।’
শেষে ধনখড় সংযোজন করেন, ‘আমি তাঁর স্বামী হওয়ায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলছি না। অন্য কোনও মহিলা সম্পর্কে এমন কিছু ঘটলে আরও কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতাম। আমাদের সংস্কৃতি এমন আচরণ বরদাস্ত করে না। যা খুশি সব সময় বলা যায় না। সংবাদমাধ্যম কেন প্রশ্ন করে না, তা পর্যন্ত উনি জিজ্ঞেস করেছেন। আমি নিশ্চিত, বিষয়টি তিনি ভেবে দেখবেন।’এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানা জন্য যোগাযোগ করা হলেও এ দিন বিকেল চারটে পর্যন্ত চেষ্টা সফল হয়নি।