WBHS চাই, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ চাই না। সম্প্রত এই দাবিতে একজোট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শিক্ষক সংগঠন।
স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের দীর্ঘ দিনের দাবি আশার আলো দেখেছিল ৩ বছর আগে। কলকাতায় নজরুল মঞ্চে আয়োজিত শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন । কিন্তু ৩ বছর কাটতে না কাটতেই সেই প্রকল্পে মোহভঙ্গ হচ্ছে শিক্ষক মহলের। প্রকল্পে নথিভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকাংশেরই জেলায় জেলায় নাম প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৯৮% অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ 'ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম'-এর পক্ষে আর মাত্র ২% শিক্ষক-শিক্ষিকা ‘স্বাস্থ্যসাথীর’ পক্ষে নিজেদের মতামত প্রদান করেছেন। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও ১১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা করোনা আবহের মধ্যেও এই প্রকল্প থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছেন। তাই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই ওঠে যে, কেন এই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা শিক্ষকমহলে জায়গা করে নিতে পারেনি?
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতে এর এক বড় কারণ বৈষম্য। যে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মচারীদের বিনা প্রিমিয়ামে পরিষেবা দেয়, তার সুবিধা নিতে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের চিকিৎসা ভাতার টাকা কেটে নেওয়া হয়। আবার ওই একই ভাতার বিনিময়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ীপদে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিমের সুবিধা ভোগ করলেও স্কুল শিক্ষকরা কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত। তাই প্রাথমিক থেকে হাইস্কুল সর্বত্রই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে এই বৈষম্য নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নথিভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কেউ কেউ ভালো পরিষেবা পেলেও অধিকাংশেরই এই সুবিধা পেতে গিয়ে হাসপাতালের মনোভাব ও ব্যবহারের কারণে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাঁদের মতে, ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম-এর সুবিধা অনেক বেশি। রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ পাওয়া থেকে শুরু করে ও পি ডি চিকিৎসা, রিইমবার্সমেন্ট ও সম্প্রতি করোনা চিকিৎসার মতো সুবিধা এতে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যসাথী-তে থাকার কারণে এই উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত শিক্ষকরা।
তাই শিক্ষকদের দাবি, চিকিৎসা ভাতার বিনিময়ে যদি কোনও স্বাস্থ্যবিমার পরিষেবা সরকারি তরফে দেওয়া হয় তবে তা রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও স্থায়ীপদে কর্মরত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম’-ই দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের তরফে এ বিষয়ে দাবি করা হলেও বর্তমানে আবার শিক্ষকমহলে এই নিয়ে জোরদার দাবি উঠছে।