‘এত অসম্মান কেন করছো? প্লিজ এটুকু রেসপেক্ট তো দেবে’- কালীঘাটের বাড়িতে দাঁড়িয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের এমনই কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটে যে বৈঠক হওয়ার কথা আছে, তার ভিডিয়োগ্রাফি করা নিয়ে যে জট হয়েছে, তার জেরে নির্ধারিত সময়ের ৯০ মিনিট পরেও আলোচনা শুরু না হওয়ার পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। জুনিয়র ডাক্তারদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দু'পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন। শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, যখনই বৈঠক করবেন না, তখন কেন তাঁকে অসম্মান করা হল? সেইসঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন যে তাঁরা যদি বৈঠক না করেন, তাহলে যেন নিদেনপক্ষে বাড়িতে ঢুকে চা খেয়ে যান। যদিও তাতে রাজি হননি।
‘এত অসম্মান কেন করছো?’
শনিবার রাত ৮ টা ৩০ মিনিট নাগাদ কালীঘাটে নিজের বাড়ির সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভিডিয়োটা আমরা আজ দিতে পারব না। আমরা মিনিটস করে দেব। ভাই, তোমরা ঠিক করো। তোমরা যদি কেউ আসতে চাও, আমি সবাইকে বলব, যারা যারা আসতে চাও, তারা দয়া করে আসো।’
'প্লিজ এটুকু রেসপেক্ট তো দেবে'
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'তোমরা যদি বাড়িতে এসে মিটিংই না করো, তাহলে আমায় চিঠি দিলে কেন? এত অসম্মান কেন করছো? অনেক অসম্মান করছো তোমরা। আগেও তিনদিন দু'ঘণ্টা করে অপেক্ষা করছি। আমি যে কারণে নিজে ছুটে গিয়েছিলাম। প্লিজ এটুকু রেসপেক্ট তো দেবে।'
মুখ্যমন্ত্রী ও জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে জট
বৃহস্পতিবারের পরে শনিবারের প্রস্তাবিত বৈঠকেও ভিডিয়ো নিয়ে জট তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেন যে বৈঠকের লাইভস্ট্রিমিং করতে হবে। যদিও তাতে রাজি ছিল না রাজ্য সরকার। কয়েক দফায় আলোচনা করেও সমাধানসূত্র না মেলায় ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখার প্রস্তাব দেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তাঁরা দাবি করেন, কালীঘাটে দু'জন ভিডিয়োগ্রাফারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাই রাজ্যকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে প্রশাসনের তরফে আলাদা করে ভিডিয়োগ্রাফি করা হোক। আর তাঁরাও আলাদাভাবে ভিডিয়ো করবেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবেও রাজ্য সরকার রাজি হয়নি বলে দাবি করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এমনকী রাজ্য সরকারের তরফে যিনি ভিডিয়ো করবেন, তাঁর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিকে রাখারও প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, রাজ্য সরকারের তরফে বারবার সওয়াল করা হচ্ছিল যে শুধুমাত্র তারাই ভিডিয়ো করবে।
সেই প্রস্তাবে অবশ্য প্রাথমিকভাবে রাজি ছিলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। কথা বলেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে। তিনি জানান যে সুপ্রিম কোর্টে এখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনায় এখন মামলা চলছে। তাই এখন ভিডিয়ো প্রকাশ করা যাবে না। তাঁর উপরে আস্থা-ভরসা রাখার আর্জি জানিয়ে মমতা জানান যে আপাতত রাজ্যের তরফে ভিডিয়ো করে রাখা হবে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে কোনওরকম হেরফের ছাড়াই জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সেই ভিডিয়ো। আর বৈঠকের কার্যবিবরণী রাখা হবে। তাতে রাজ্য সরকারের আমলা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করবেন।