এখন রাজ্য–রাজনীতিতে একটাই খবর মুকুল রায়। তাঁর বিজেপিতে যাওয়া এবং আবার সেখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরা—একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। ২০১৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল রায়। সেখানে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হন মুকুল রায়। এরপর এই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এমনকী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির ১৮ আসন লাভের ক্ষেত্রে মুকুল রায় যে অন্যতম কারিগর, তা স্বীকার করে নেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও।
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়লেন কেন? তাঁর কথা অনুযায়ী, দলে পরিবারতন্ত্র স্থান পেয়েছে। সেখানে আর কাজ করার পরিবেশ নেই। এমনকী দলের অন্দরে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এইসব অভিযোগ ছিল তাঁরই। তখন অবশ্য সারদা থেকে নারদ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই, ইডি তাঁর পিছু নিয়েছিল। বাধ্য হয়ে দল ছাড়েন মুকুল রায়। সমালোচনা করেন তৃমমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন এই দল তাঁর নামে রয়েছে। তারপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি তিনি প্রশ্ন তুলে দেন। এই সবমিলিয়ে দল ছাড়েন তিনি।
এরপর তিনি শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙার। একে একে সব্যসাচী দত্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষাল, শুভেন্দু অধিকারী, শীলভদ্র দত্ত–সহ আরও একঝাঁক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা গিয়ে পদ্মাসনে বসেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, মুকুল রায় নিজে বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেস দলটাই উঠে যাবে। ওই নামে আর কিছু থাকবে না।’ বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয় বলেও সওয়াল করেছিলেন তিনি।
তাহলে আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরা কেন? এখন তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। যশবন্ত সিনহা চেয়ারম্যান। কুণাল ঘোষ রাজ্য সম্পাদক। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং একই সমস্যা আবার হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্য বিজেপির একাংশের সঙ্গে মুকুল রায়ের সম্পর্কের তাল কাটে। হঠাৎ করে মুকুল রায়ের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে হাজির হন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তড়িঘড়ি পৌঁছন দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যারা। ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, মুকুলের সঙ্গে রাজ্য বিজেপি ফাটল এখন বেশ চওড়া হয়েছে। সেজন্যই সম্ভবত ফের তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরতে হল মুকুল রায়কে। সম্পূর্ণ হল বৃত্ত। তবে সিবিআই–ইডি আবার পিছু নিতে পারে মুকুল রয়ের।