ঘটনার পর দু’দিন কেটে গিয়েছে। এখনও নীরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে দলের অন্দরে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই। নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি বিতর্কে এবার মমতার পাশে দাঁড়ালেন সোনিয়া গান্ধী। গোটা ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন নীরব, ঘনিষ্ঠ মহলে সেই প্রশ্নও তিনি তুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করায় রাজনৈতিক মতবিরোধকে দূরে সরিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।
জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে আখেরে বিজেপির অস্বস্তিই বাড়ল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠান শেষে রাজ্য বিজেপির দু’একজন নেতা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়ার নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা বুঝে যান, পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক্ষেত্রে অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স–এর কৌশল নিয়েছেন। তাই কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্যর মতো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘটনার নিন্দা করার বদলে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। এই পরিস্থিতিতে এআইসিসি’র মুখপাত্র অজয় মাকেন বলেন, ‘জয় শ্রীরাম স্লোগান কোনও বিষয় নয়। কিন্তু ওই স্লোগানকে আশ্রয় করে দর্শকদের একাংশ যেভাবে মমতাকে হেও করেছে, তা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যাপারে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল কেন্দ্র। মঞ্চে ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেরই রাজ্যে, তাঁকে অনুষ্ঠানে ডেকে ওই অপমানের পুরো দায় নরেন্দ্র মোদীর। কেন তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে একটি কথাও বললেন না মোদী?’
রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই মনে করছেন, নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকারি অনুষ্ঠানে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তোলা মোটেই সমীচীন কাজ হয়নি। বিধানসভা ভোটের আগে এতে তৃণমূল কংগ্রেসের পালেই হাওয়া আসবে বলে তাঁদের অভিমত। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের রোষে পড়ার ভয়ে তাঁরা সেই মনের কথা মুখে আনছেন না। মাসখানেক আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বাংলায় এসে টুইট করেছিলেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শান্তিনিকেতনে। এর পর আবার শ্রীচৈতন্য সম্পর্কে মন্তব্য ঘিরেও বিভ্রান্তি ছড়ায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘শনিবারের ঘটনার পর বিজেপির বাংলার নেতারা মিনমিন করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর উত্তর ভারতের নেতারা ওই ঘটনাকে সমর্থন করে টুইট শুরু করায় এই রাজ্যের বিজেপি নেতারা পিছু হটলেন।’ অধীরবাবু আরও বলেন, ‘চোখের সামনে সংসদীয় পদমর্যাদার একজন মহিলাকে অপমানের পরেও কেন নীরব ছিলেন নরেন্দ্র মোদী? বাঙালির এই অপমানের বদলা নেবে বাংলাই।’ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা জিতিন প্রসাদও বলেন, ‘বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় কংগ্রেস লড়ে যাবে।’
গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, এই রাজ্যে ধর্মের পাশাপাশি বাঙালি জাত্যভিমানের বিষয়টিও যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বহু চেষ্টা করেও দিল্লির নেতাদের বোঝাতে পারছেন না বঙ্গ–বিজেপির উদারপন্থী নেতারা। শনিবারের ঘটনার জেরে তাঁরা ফের বিজেপি থেকে মুখ ফেরাবেন না, তার গ্যারান্টি কোথায়? দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা কি সম্মতিরই লক্ষণ?
সূত্রের খবর, শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতের সংখ্যা ছিল প্রায় হাজার দেড়েক। তার মধ্যে এক হাজার আমন্ত্রণপত্র বিজেপি থেকেই বিলি হয়েছিল। বিজেপির তাত্ত্বিক নেতা স্বপন দাশগুপ্তর অবশ্য মন্তব্য, ‘শনিবারের ঘটনায় কার লাভ হল, কার ক্ষতি, তা সময়ই বলবে।’