শ্রম দফতরের বৈঠকে মেলেনি কোনও সমাধানসূত্র। আর তার জেরে সোমবার বিকেলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম চত্বর। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এসএলও (সেল্ফ এমপ্লয়েড লেবার অর্গানাইজেশন) শ্রমিকরা। স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে চলে ভাঙচুর। তাঁদের অভিযোগ, গত ৮–৯ মাস ধরে তাঁদের রোজগার বন্ধ। ফর্ম ফিল আপ করে ফর্ম প্রতি যে ২ টাকা করে কমিশন তাঁরা পেতেন তা না পাওয়ায় সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে তাঁদের। কিন্তু কেন মিলছে না সেই কমিশন? কেন বন্ধ তাঁদের রোজগার? তা নিয়েই এদিন মুখ খুললেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
এসএলও শ্রমিকদের অভিযোগ, এদিনের বৈঠকে তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষার কথা ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, তার কিছুই হয়নি। এক বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এদিন দলের হয়ে, সরকারের হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন শুধু। আমাদের সমস্যা সমাধানে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
এদিন বৈঠকে ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে। ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি এদিন এসএলও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তাঁরা কেন কমিশন পাচ্ছেন না, সেটা আমি আমার বক্তব্যে বুঝিয়ে বলেছিলাম। এত মাস ধরে তাঁরা যে কমিশন পাচ্ছেন না এটা যে কোনও গরিব মানুষের কাছে খুবই দুর্ভাগ্যের।’ পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘রাতারাতি এ নিয়ে সমাধান হয় না। এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে। মলয়দা আছেন। দায়িত্বপূর্ণ মানুষ। দেখে নেবেন।’
তবে কমিশন পাওয়া বন্ধের পিছনে আসল কারণ কী? উত্তরে শোভনদেববাবু জানিয়েছেন, ‘কমিশন না পাওয়ার পিছনে দায়ী এক অফিসার। তিনি এমন এক কাজ করেন যে ওয়েবসাইটটাই উড়ে যায়। তার পর করোনা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওরা কাজ করতে পারেনি।’ সেই অফিসারের নাম না করলেও তিনি দুর্নীতিতে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
তিনি এদিন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমি আশ্বাস দিতে পারি যে ওই শ্রমিকদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ব্যবস্থা করবেন। আমি তো ওই দফতরের মন্ত্রী নই। মলয়ের কাছে আমি আশা করব যে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুঝিয়ে বলে অন্ততপক্ষে এই মানুষদের কিছু টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। ফিরহাদ হাকিম আছেন, সাধন পান্ডে আছেন তাঁরা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কিছু বলবেন। ছেলেগুলোর কষ্ট সত্যি চোখে দেখা যায় না।’
একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখানোর অনুরোধ করেছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আপনারা যে আন্দোলন করছেন তা সঠিক, আপনাদের দাবিটাও সঠিক। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করুন। ক্ষুধা কখনও কখনও মানুষকে পাগল করে দেয়। ওরা ৭–৮ মাস কোনও টাকা পায়নি। ওদের মধ্যে অনেকে বিবাহিত। সন্তান–সন্ততি রয়েছে। ওরা ভেবেছিল যে আজ একটা ঘোষণা হবে। সেটা না হওয়ার জন্যই হয়তো এই বিক্ষোভ।’