‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’— এই গান যতটা জনপ্রিয় ততটাই সত্যি। তাই বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের মন পেতেই কি স্পনসর জোগাড় করে দিয়ে আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের জায়গা পাকা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? বাঙালির আবেগজড়িত শতবর্ষ পুরনো ওই ফুটবল ক্লাবের এক প্রকার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ানোর পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রচেষ্টাকে কটূ চোখেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার নবান্নে ইস্টবেঙ্গলের স্পনসরপ্রাপ্তির ঘোষণা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর ইস্টবেঙ্গল শতবর্ষ উদ্যাপন করছে। তার মাঝেই আইএসএল খেলা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। আইএসএলে মোহনবাগান তার জায়গা করে নিলেও ইস্টবেঙ্গল সেই সুবিধা করে উঠতে পারছিল না। ১০০ বছরের এই ক্লাবের লাখো সমর্থক বঞ্চিত হোক তা কাম্য নয়।’
তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এই ঘোষণার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ফেসবুক, টুইটারে ভার্চুয়াল অভিনন্দন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ধ্বনিতে মেতে ওঠেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। তাঁরা জননেত্রীকে ধন্যবাদ জানান ‘শরণার্থী’ হওয়ার থেকে ক্লাবকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু এই জয়জয়কারের প্রতিধ্বনি কি সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত মিলবে?
বঙ্গবাসী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মমতার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মন জিতেছে। ক্রীড়া সংগঠনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা ও রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার দৌড়ে বিজেপি–কেও পেছনে ফেল দিতে সক্ষম মমতার এই পদক্ষেপ। কিন্তু এর জেরে ২০২১–এর নির্বাচনে তৃণমূলের তেমন একটা সুবিধা হবে বলে আমার মনে হয় না। কোন দল কোন ফুটবল ক্লাবের পাশে দাঁড়িয়েছে— এর ওপর ভিত্তি করে কোনও নির্বাচনী লড়াই হয় না।’
তবে শুধু ইস্টবেঙ্গল নয়। আপামর বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের খুশি করতে বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও ঘোষণা করেন যে, কলকাতা শহরে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান স্পোর্টিংয়ের নামে তিনটি তোরণ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিজেপি–র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, ‘যুব সমাজের মধ্যে যে মমতার জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে সেটা তিনি ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছেন। তাই এ সব করে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। এতে যদিও কোনও লাভ হবে না।’
তবে ফুটবল ক্লাব বা যে কোনও ক্রীড়া সংগঠনের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ রাখার এই প্রথা বহু পুরনো। এর আগে বাম আমলে সিপিএম করেছে, এখন তৃণমূল করছে। আর জাতীয় স্তরে তো বিজেপি বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন বা ক্লাবের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখেই।
যদিও এর আগে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ক্লাবের নানা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেও আখেরে কোনও লাভ করতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ২০১৭–তে বিজেপি–র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিতে আবেদন জানানো হয়ে। বছরখানেক আগে এ ব্যাপারেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে দেখা করেন ২ ক্লাবের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি।