করোনাকে হারালেও হারাতে পারলেন না করোনার আতঙ্কতে। তাতেই বেঘোরে মৃত্যু হল এক গৃহবধূর। করোনামুক্ত হলেও বাড়িতে ঠাঁই না হওয়ায় বদ্ধ দোকানে শ্বাসকষ্টে অসহায় মৃত্যু হল তাঁর। রবিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা নিউ টাউনের গৌরাঙ্গনগরের। ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে স্থানীয় পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়েও।
জানা গিয়েছে গৌরাঙ্গনগরের শ্রীকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা ওই মহিলার জ্বর আসে। কিন্তু তাঁকে পরীক্ষা করানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি পরিবারের তরফে। খবর পেয়ে উদ্যোগী হয়ে মহিলাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করান বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। গত ২৯ এপ্রিল তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
দিন দশেক চিকিৎসার পর গত শুক্রবার করোনামুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মহিলা। এর পরই শুরু হয় সমস্যা। মহিলার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে সেখানে নিজে যেতে অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, ওই বাড়িতে প্রচুর মানুষ থাকেন। যাদের করোনা ছড়াতে পারে।
ওদিকে মহিলার শ্বশুরবাড়ির দাবি ছিল তাদের বাড়িতে ভাল শৌচালয় নেই। খবর পেয়ে তৎপর হন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। তিনি ২ পরিবারকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মহিলাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে রাজি নন কেউ।
এর পর মহিলার বোনের উদ্যোগে নির্মিয়মাণ একটি আবাসনের একটি বন্ধ দোকানঘরে থাকার ব্যবস্থা হয় মহিলার। সামনের দিকে শাটার কিছুটা তুলে লাগিয়ে দেওয়া হয় বিছানার চাদর। গোটা দোকানে নেই আর কোনও ছিদ্র। প্রচণ্ড আর্দ্রতার মধ্যে বদ্ধ জায়গায় শ্বাসকষ্টে রবিবার মৃত্যু হয় মহিলার।
কলকাতার নাকের ডগায় এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল করোনায় কতটা আঁধারে ঢেকেছে মানুষের মন। সংক্রমণের আতঙ্ক এতটাই প্রবল যে পরিবারের সদস্যকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেও কুণ্ঠা করছেন না প্রিয়জনরা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোনও ব্যক্তিকে চিকিৎসকরা করোনামুক্ত ঘোষণা করলে তার থেকে করোনা ছড়ানোর আর কোনও সম্ভাবনা নেই। হাসপাতাল থেকে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন তিনি। করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে তার থেকে করোনা ছড়ানোর আতঙ্ক একেবারেই ভিত্তিহীন।