‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে আপনাকে হালকা কাজে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ ফোনের ওপারে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এপারে এ কথা জানতে পেরে বহু দিনের দাবি মিটল প্রখ্যাত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর।
১৯৯৭ সাল থেকে মুকুন্দপুরের হেলেন কেলার বধির বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ করেন মনোরঞ্জনবাবু। এখন তাঁর বয়স ৭০। প্রেসার, সুগারের সমস্যা রয়েছে। দুটো হাঁটুই প্রতিস্থাপিত। ছানির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে দু’চোখে। চিকিৎসকেরা তাঁকে আগুনের সামনে ভারী কাজ করতে বারণও করেন। কিন্তু নিরুপায় মনোরঞ্জনবাবু পেট চালাতে দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনশিক্ষা প্রসার দফতরের অধীন এই চাকরি করছিলেন। তার ওপর লকডাউনের জেরে স্কুল বন্ধ থাকায় বেতনও মিলছিল না। অবশেষে কঠিন এই পরিস্থিতি থেকে এবার মুক্তি পেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। তাঁকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার কাছে বিদ্যানগর পাবলিক লাইব্রেরিতে বদলি করা হয়েছে।
মনোরঞ্জনবাবু বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি সরকারি বদলির নির্দেশের কপি হাতে পেয়ে গিয়েছি। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই নতুন জায়গায় কাজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে আছে।’ মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বাংলার দিদিকে। যিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে আমার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। এই তুচ্ছ অনুরোধ নিয়ে বছরের পর বছর আমি এ অফিস থেকে ও অফিসে ছুটে বেড়িয়েছি। আমার আস্থা, বিশ্বাস, ভরসা ছিল একমাত্র দিদির ওপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দাদা আমার খবর দিদির কানে পৌছে দিয়েছেন।’
একইসঙ্গে এই দীর্ঘ যুদ্ধে পাশে থাকার জন্য তিনি শুভানুধ্যায়ী অনেককেই তাঁর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ এই দিনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি বাংলা আকাদেমির সভাপতি শ্যাঁওলী মিত্র দিদিকে। উনি সেই ২০১৪ সাল থেকে কতশত জনকে যে আমার জন্য বলেছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই দাদা অনন্ত আচার্যকে। আমার জন্য উনি ৮৬ বার বিকাশ ভবনে গেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছেন অফিসারের সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞ আমি অধ্যাপক ভাই একরামূল হকের প্রতি। আমার একটা ভাল কিছু হোক এই জন্য পাগলের মতো এক মন্ত্রীর দপ্তর থেকে আর এক মন্ত্রীর দপ্তরে দৌড়ে বেড়িয়েছে।’
সাহিত্যিক রান্নার কাজ ছেড়ে এবার গ্রন্থাগারের চারিদিকে বইয়ে ঘেরা থাকবেন, এর থেকে ভাল কী–ই বা হতে পারে।