শহরের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের দাপট দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আর তার জেরে বিপাকে পড়েন রোগীর আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারের সদস্যরা। এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সময় বড় অঙ্কের টাকা হেঁকে নিজেদের দাপট দেখান অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। আর গ্রামবাংলা থেকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসতে গেলে তো কথাই নেই। শহরের মধ্যে চালকের মুখ থেকে বেরতে শোনা যায় ভাড়ার অঙ্ক—১২০০ টাকা। আর অক্সিজেন লাগলে আরও ১০০ টাকা বাড়তি দিতে হয়। জেলা থেকে শহরে আসতে গেলে যা ইচ্ছে ভাড়া দাবি করা হয়। রোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে মুনাফা করে। প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলির জন্য রোগীর মৃত্যুও ঘটে। এই পরিস্থিতি বদাতে রাজ্য সরকার অ্যাম্বুলেন্সের রেট বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে এবার যাত্রীসাথী অ্যাপের মাধ্যমে মিলবে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। রাজ্যে এই প্রথম অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু হল। স্বাস্থ্য ও পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, এই অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া একপ্রকার ঠিক হয়ে গিয়েছে। বেলাগাম হয়ে ওঠা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলির দাপট পাল্টাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার স্থির করেছে অ্যাম্বুলেন্সের রেট বেঁধে দেওয়া হবে। তাই ভাড়া কত রাখা হবে? সেটা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্য ও পরিবহণ দফতরের কর্তারা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইয়োলো ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যাত্রীদের জন্য ‘যাত্রী সাথী’ নামে একটি অ্যাপ পরিষেবা চালু করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীরা ট্যাক্সি পান। ওলা–উবারকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে যাত্রী সাথী। এবার এই অ্যাপ পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সকে।
অন্যদিকে মানুষ যাতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হন, বেশি অর্থ দিয়ে সর্বসান্ত না হন এবং দাপট সহ্য করতে না হয় তার জন্যই এই বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, যাত্রীসাথী অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া স্থির হয়েছে, প্রতি ১০ কিমি যেতে প্রাইভেট নন–এসি অ্যাম্বুলেন্স নিতে পারবে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা (অক্সিজেন সহ)। এসি হলে ১২০০ টাকা। ১০ কিমির পর প্রত্যেক কিমি ২০ টাকা। অ্যাডভান্স লাইফ সাপোর্ট বা কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে ১০ কিমি যাওয়ার সর্বোচ্চ ভাড়া ৩৫০০ টাকা। তারপর থেকে কিমি পিছু ভাড়া সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা। কলকাতার বাইরে গেলে বাড়তি অর্থ দাবির যে রেওয়াজ তা মেনে নেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: সংসদে বিজেপি সাংসদরা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন, কল্যাণ কাণ্ডে নয়া কৌশল
আর কী জানা যাচ্ছে? ট্যাক্সির মতো অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা মিললে চালকদের এই দাপট কমানো যাবে। এই বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘দ্রুতই আমরা যাত্রীসাথী অ্যাপে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিয়ে আসছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় রোগীদের কম খরচে পরিষেবা দেওয়ার কথা ভাবেন। আমরাও সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি।’ তবে কবে এই পরিষেবা চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের শুরুতেই নাগরিকদের এই উপহার দিতে চলেছে পরিবহণ দফতর।