আরজি করে ছাত্রীদের এমন প্রস্তাব দেওয়া হত যে মহিলা হিসেবে আপনি মুখ দেখাতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে এমনই মন্তব্য করলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষের পিজিটি তথা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ অনিকেত মাহাতো। সোমবার নবান্নের বৈঠক থেকে অনিকেত বলেন, ‘আপনাকে যদি একজন মহিলা হিসেবে বলি, ওই ছেলেগুলো মেয়েদের কী প্রস্তাব দিত, কী জায়গা রাখত কলেজ ক্যাম্পাসে, আপনি নিজে একজন মহিলা হিসেবে মুখ দেখাতে পারবেন না। এরকম ছিল।’
মমতা বনাম অনিকেত
সোমবার নবান্ন থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেন অনিকেত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত কথার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। বৈঠকের মধ্যেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষের উপরে ক্ষোভপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন যে কেন রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে ৪৭ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেটাও কি থ্রেট কালচার নয়, প্রশ্ন তোলেন মমতা।
আরজি করের অধ্যক্ষ কিছু বলার আগেই মমতার সঙ্গে কার্যত কথার লড়াই শুরু করেন অনিকেত। রীতিমতো সুর চড়িয়ে তিনি বলতে থাকেন, আরজি করে যে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাঁরা ‘কুখ্যাত অপরাধী’। যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেটি সবকিছু খতিয়ে দেখার পরই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, 'আপনি যদি বলেন যে স্যার ভুল বলেছেন, তাহলে (এই বার্তা যাবে যে) আমরা কুখ্যাত অপরাধীদের সমর্থন করছি।' পালটা মমতা জানান, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা বলছেন না। তিনি বলছেন যে রাজ্যকে না জানিয়ে কেন করা হয়েছে। থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী কথা বলার সময় গলার সুর চড়ান অনিকেত
মুখ্যমন্ত্রী কথা বললেও নিজের সুর চড়াতে থাকেন অনিকেত। মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত কথা শেষ করতে দিচ্ছিলেন না। অনিকেত বলতে থাকেন যে কেউ পড়াশোনা মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে থ্রেট কালচারে যুক্ত হতেই পারেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হয়েছেন মানেই তিনি কলেজে তোলা তুলবেন না, মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না, এমনটা নয়।
কিন্তু কীভাবে তাঁরা এরকম (থ্রেট কালচারে যুক্ত) হয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। সেটার প্রেক্ষিতে অনিকেত বলেন, ‘আপনি যে জায়গাটা ধরেছেন, একদম ঠিক ম্যাডাম। যে একটা সুস্থ-স্বাভাবিক ছেলে ক্যাম্পাসে ঢুকল। কিন্তু ক্যাম্পাসের ভিতরে কী এমন হল, যে তাঁকে আজ কুখ্যাত অপরাধী বলতে হচ্ছে।’
সন্দীপের কীর্তিকলাপ জানতেন না, দাবি মমতার
সেইসঙ্গে অনিকেত দাবি করেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন সন্দীপ ঘোষের কীর্তিকলাপ নিয়ে আগেও অভিযোগ জানানো হয়েছে (মমতা বলেন যে তিনি এসব বিষয়ে আগে কখনও শোনেননি)। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যদি সেটা জানেন না বলে দাবি করেন, তাহলে সার্বিকভাবে সেটা রাজ্যের ব্যর্থতা বলে দাবি করেন অনিকেত।