রাজ্যের কর্মপ্রার্থীদের চাকরির জন্য আর বাংলার বাইরে যেতে হবে না। রাজ্যেই হবে কর্মসংস্থান। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেওয়া যুবক-যুবতীদের নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে এমনটাই আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অনুষ্ঠানে তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘ আর চাকরির জন্য বাংলার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এ বার চাকরি আপনার দরজায় এসে ডাকবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ছ’টি জেলায় মোট এগারো হাজার চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। উৎকর্ষ বাংলার লোগো দেওয়া এই নিয়োগপত্র তাঁদের হাতে তুলে দেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার নোডাল অফিসাররা। এই নিয়োগপত্র দেওয়া নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়ায়। মঞ্চ থেকে মমতা জানান, নিয়োগপত্র ইতিমধ্যেই চাকরিপ্রার্থীদের ইমেইলে চলে গিয়েছে। যাদের কাছে এই নিয়োগপত্র গিয়েছে তাঁদের হাত তুলতেও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরে জানা যায় সেই ইমেল এখনও করা হয়নি। এ নিয়ে কিছু উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে বিষয়টি পরিষ্কার করতে বলেন। মুখ্যসচিব তালিকা পড়ে জানিয়ে দেন কোন জেলায় কত নিয়োগ হয়েছে।
নিয়োগপত্রগুলি হাতে হাতে চাকরিপ্রার্থীদের দিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। নোডাল অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয় যে বাসে করে চাকরীপ্রার্থীরা এসেছেন, ফেরার সময় সেখানে হাতে হাতে তাঁদের নিয়োগপত্র দিয়ে দিতে। সব নিয়োগপত্র তৈরি আছে কি না মুখ্যমন্ত্রী ফাইল খুলে তা দেখেন। যাদের এ বারে নিয়োগের সুযোগ হয়নি তাঁদের একটি তালিকাও তৈরি করতে নির্দেশ দেন মমতা।
আগামী ১৪ তারিখ খড়্গপুরে আরও ৭ হাজার নিয়োগ হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়োগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোর উদাহরণ তুলে বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর চল্লিশ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ডেকরেটার্স, সাজসজ্জা শিল্পীরা বেশি আয় করেন পুজো থেকে।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ অনেকই জানেন না রাজ্যে কত এমএসএমই (ক্ষুদ্র শিল্প) আছে। রাজ্যে ৯০ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। এই শিল্পগুলিতে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষ কাজ করেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ রাজ্যে ২০০টিরও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হচ্ছে। রঘুনাথপুরে একটি প্রকল্পে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। সেখানেও প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।’’
সোমবার নিয়োগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, ‘‘রেল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সেল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।এরা সব কিছু বেচে দিচ্ছে। তা হলে চাকরি কী করে হবে।’’ মমতা বলেন, ‘‘দেশে যেখানে ৪৫ শতাংশ নিয়োগ কমে গিয়েছে, সেখানে বাংলায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান বেড়েছে।’’ ভালো চাকরির জন্য বাংলা বাইরে গেলেও, যারা যাচ্ছেন তাঁদের দেশে ফিরে আসতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ ভালো লাগছে বাংলা থেকে ছেলেমেয়েরা বাইরে চাকরি পাচ্ছে। বাইরে গেলেও থাকবেন না। চলে আসবেন। দেশের মাটির আলাদা গুরুত্ব আছে। পরিবারের সঙ্গে বসে শাক-ভাত খাওয়াও আনন্দের।’’
অনুষ্ঠানে আগত শিল্পপতিদের উদ্দেশ বলেন, ‘‘যদি কোনও অভিযোগ থাকে তবে আমাদের গ্রিভান্স সেলে (অভিযোগ নিষ্পত্তি বিভাগ) অভিযোগ জানান।’’
সভায় শেষে মমতার স্লোগান,‘‘ জয় বাংলা। জয় বাংলা। জয় বাংলা। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।’’