সদ্য বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার ও হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি ঘিরে উত্তাল প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তর প্রান্তে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে দিল্লিও। তার মাঝে কিছুদিন আগে, বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশে রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করেন। মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি ইউনুস সরকারের ঢাকা। ওপার বাংলার বহু নেতাই দিদির এই মন্তব্য ক্ষুব্ধ। এদিন এক নামি বাংলা চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে মমতা ফের শান্তিসেনা প্রসঙ্গ তুলে ব্যাখ্যা করে দেন, যে এই মন্তব্য তিনি কেন করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বার্তা, তিনি অত্যাচারিতদের সঙ্গে রয়েছেন।
‘অত্যাচারিতদের পাশে আছি’
মমতা ওই সাক্ষাৎকারে বলেন,'আজকে বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটছে, যদিও অন্যদেশ সম্পর্কে আমি কোনও কমেন্ট করি না, আমি এই বিষয়ে কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করি সম্পূর্ণভাবে… চিরকাল। তাদের নীতিই এক্ষেত্রে আমাদের নীতি।' ওপার বাংলা ইস্যুতে তাঁর সরকারের অবস্থান ফের স্পষ্ট করে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্র করে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,'কিন্তু একটা ঘটনা ঘটবে, সেন্ট্রাল ইন্টারফেয়ার করবে না! যাঁরা অত্যাচারিত হচ্ছে, আমি তাঁদের পক্ষে। আমি চাই তাঁরা বিচার পাক। এটা কোনও কাস্ট, কমিউনিটি, ক্রিড করে না, সরকার যখন দুর্বল হয়, আর এক শ্রেণির মাফিয়া রাজ যখন সুযোগ পায়, তখন এমনটা ঘটে। মাৎস্যনায় কথাটা আমরা ইতিহাসে পড়েছি। বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে খায়… লিডারলেস টাইপ হয়ে গিয়েছে। সেই জন্য প্রবলেম হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ঢুকব না। আমি বলব, প্লিজ সেভ আওয়ার পিপল।'
ট্রলার ধরা পড়ার ঘটনা
মমতা এরপরই তুলে ধরেন, সদ্য কীভাবে বাংলাদেশে আটকে রয়েছে এপার বাংলার দুটি ট্রলার। এদিকে, ওপার বাংলার ট্রলার এদিকে ধরা পড়লেও, মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান দিদি। মমতা বলেন,' ২ মাস আগে দেখলাম, কাকদ্বীপ নামখানায় ৭৯ মৎস্যজীবী তাঁদের ২ টো ট্রলার ওপারে গিয়েছিলেন, আমরা ট্র্যাক করে দেখলাম, তাঁদের বাংলাদেশে আটক করা হয়েছে, আমরা আমাদের আইনজীবী দিলাম বাংলা থেকে, কেন্দ্র জানত।' আটকদের ছাড়াতে আইনজীবী দেওয়া হয়, বলে জানান মমতা। ভরা সভায় দিদি জানান,' আজও তাঁরা ছাড়া পাননি। আরও একটা ট্রলার গিয়েছে সেটারও মৎস্যজীবীরা আটক হয়েছেন, তাঁরা জেলে আছেন। আগে কিন্তু এটা হত না।'
এরপর মমতা দেন পাল্টা বার্তা, ‘বাংলাদেশের একটা ট্রলার এখানে আটক হয়, আমাদের কোস্টাল পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। তাঁদের চিকিৎসা হয়। তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি।' শান্তির আবেদনের পক্ষে থেকে মমতা বলছেন,' আমি মনে করি, যদি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে থাকে, তা আপনারা বসে দেখে নিন। কিন্তু সমঝোতা বন্ধ করা ঠিক নয়। দুই দেশ কথা বলে অস্থিরতা কাটিয়ে সুস্থির পরিস্থিতিতে আসুক।’ তিনি ফের দাবি করেন বাংলাদেশ ইস্যুতে সংসদে বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতির জন্য।
শান্তিসেনা ইস্যু
শান্তিসেনা নিয়ে মমতা বলেন,' পিস কিপিংএর কথা কেন বলেছি.. যখনই কোনও দেশে অস্থিরতা হয়, শান্তি বিঘ্নিত হয়…. তখনই ইউএনর নিজস্ব শান্তিরক্ষা বাহিনী থাকে… সেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন মানুষ থাকেন'। এরই সঙ্গেই তিনি শ্রীলঙ্কার কথাও তুলে ধরেন এই ইস্যুতে। মমতা বলেন,'ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যদি একান্তই খুবই খারাপ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ভারত ইউএনকে বলতেই পারে যে ,তোমাদের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে পাঠাও, অন্তত মানুষ যাতে নিরাপত্তা পায়, সেটা দেখা উচিত।' তিনি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক, সাংস্কৃতিক থেকে বাণিজ্যের দিক থেকে সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বলেন,' আমাদের মনটা খোলা, আমরা সবাই সবাইকে ভালোবাসি। আমি চাই, রাজনৈতিক মতামত যাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশও ভালো থাক, ভারতও ভালো থাক।'