লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে দেখা গিয়েছে যে মোটের উপর ভালো অবস্থানেই রয়েছে তৃণমূল। তবে শহরাঞ্চলে কিছু জায়গায় তৃণমূলের ফল ভালো হয়নি। অন্যদিকে বিজেপির কার্যত ভরাডুবি। তবে এর জেরে বহু ক্ষেত্রে তৃণমূলের আত্মতৃপ্তি একেবারে চূড়ান্ত জায়গায়। তবে এনিয়ে সতর্ক করলেন মুখ্য়মন্ত্রী। মূলত জনসংযোগ বৃদ্ধির জন্য নেতামন্ত্রীদের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এভাবেই নানা দিক তুলে ধরেছেন।
মমতা জানিয়ে দেন, মানুষের পাশে থাকতে না পারলে মানুষ পাশে থাকবে না। সেই সঙ্গেই তিনি নেতা মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, যেখানে খারাপ ফল হয়েছে সেখানে মানুষের পাশে থাকতে হবে। জনসংযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
সেই সঙ্গেই মন্ত্রী উদয়ন গুহর প্রশংসা করেছেন তিনি। মূলত নিশীথ প্রামাণিককে হারানো এবার তৃণমূলের কাছে টার্গেট ছিল। সেই নিরিখে নানা কৌশল করেছিল তৃণমূল। আর সেই ফাঁদে পা দেয় বিজেপি। এলাকায় দীর্ঘদিন না থাকার মাশুল গুনতে হয়েছে বিজেপিকে। অমিত শাহের ডেপুটি হয়েও তৃণমূলের মাস্টারমশাই জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার কাছে পরাজিত হন নিশীথ প্রামাণিকের মতো হেভিওয়েট। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল উত্তরের অধিকাংশ কেন্দ্রে এবারও বিজেপির জয়জয়কার। কিন্তু সেই নিরিখে এবার কোচবিহারে ছিল এবার কঠিন লড়াই। আর সেই লড়াইতে জিতে গেল তৃণমূল।
উদয়ন গুহ। ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে চলে এসেছিলেন তৃণমূলে। মমতার প্রশংসার পরে তৃণমূলের অন্দরে তাঁর গুরুত্ব আরও বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। আবার জগদীশ বর্মা বসুনিয়া তিনিও গিয়েছিলেন ফরওয়ার্ডব্লক থেকেই। কোচবিহার তৃণমূলে কার্যত ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তনীদের হাতেই ক্ষমতার রাশ। কার্যত নবান্নের বৈঠকে ধমক খেয়েছেন কোচবিহারের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। আর মন্ত্রিসভার বৈঠকে উদয়নকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন খোদ মমতা। তবে কি এবার আদিরা সাইড হচ্ছেন? আর নব্যদের রমরমার দিন এল?
তবে এতসব কিছুর পরেও মানুষের পাশে যাতে থাকে তৃণমূল সেজন্য সবরকম পরামর্শ দিলেন মমতা। বলা ভালো নির্দেশ।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কয়েকদিন ধরেই একেবারে অন্য মেজাজে দেখা যাচ্ছে নেত্রীকে। এমনকী দলের একাংশ যারা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে খোদ নেত্রী আওয়াজ তুলছেন। পরিস্থিতি এমনই যে বুধবার রাতে শিলিগুড়ির ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকেও আটক করে পুলিশ।
এদিকে নবান্নের বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, কোথাও জবরদখল হলে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? অনেকে আছেন এর মধ্যে। নাম বলে কাউকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না। তবে একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই তাঁরা লোক বসাচ্ছেন বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সবে রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন, কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকলে সেটাও খুলে নিয়ে বিক্রি করে দেন অনেকে। তার জন্য় একটা সিস্টেম কেন হচ্ছে না? কেন জল অপচয় হচ্ছে? …কেউ টাকা খেয়ে কেউ টাকা খাইয়ে এসব করাচ্ছেন। মমতার সাফ কথা, রাম শ্য়াম যদু মধু যেই হোন, আমিও যদি হই ছাড়বেন না। লোভ বেড়ে যাচ্ছে। লোভটাকে কমাতে হবে। সরকারি জমি দখল করে একের পর এক বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সরকার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে। তার রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না। কেন এসব হবে? দেখার দায়িত্ব কেবল আমার?