পাহাড়ে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দার্জিলিং ও কালিম্পং। ধসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক রাস্তা, তিস্তার জল উঠে এসেছে জাতীয় সড়কে। এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবারই যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গে। বর্তমানে তিনি রয়েছেন নবান্নের কন্ট্রোল রুমে এবং সকাল থেকেই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: দার্জিলিঙে প্রবল বর্ষণে, ধস, মিরিকে সেতু ভেঙে মৃত্যু অন্তত ১৪ জনের, বন্ধ রাস্তা
একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক ফোন সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সঙ্গে নিয়েই তিনি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন। বিকেলের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। শিলিগুড়ি থেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, শনিবার রাত থেকেই তিনি রাজ্যের পাঁচটি জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন এবং সকাল ছ’টা থেকে দুর্যোগের আপডেট নিচ্ছেন। মমতার কথায়, ভুটানে প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। সাতটি জায়গায় ধস নেমেছে, নদীগুলির জল বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে। এটা সবার জন্য দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। তবে রাজ্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
রাতভর ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায় এক রাতের বৃষ্টিতে যে বিপর্যয় হয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, এই বৃষ্টির তীব্রতা গত বছরের দুর্গাপুজোর আগের কলকাতা বৃষ্টিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। দুর্যোগের জেরে পাহাড়ে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বাস দিয়ে মমতা যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকতে বলেছেন। ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো না করার বার্তা দিয়েছেন। রাজ্য সরকারই নিরাপদে সকলকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া, যেন বাড়তি ভাড়া না নেওয়া হয় তার জন্য হোটেল মালিকদেরও অনুরোধ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, মৃতদের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে এবং পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরির সুযোগ দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক এখনও নির্ধারণ হয়নি, তবে প্রশাসনিক নির্দেশ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। রবিবার কলকাতায় নির্ধারিত দুর্গাপুজো কার্নিভালের কথাও উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, আজ শহরে উৎসব আছে, কিন্তু মানুষের দুঃসময়ে উত্তরবঙ্গের পাশে তিনি থাকবেন। তাই সব দিক বিবেচনা করেই আগামীকাল রওনা দেবেন।
এদিকে, দার্জিলিংয়ের এই দুর্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তাঁর বার্তা, এই কঠিন সময়ে মানবিকতা ও সহমর্মিতাই হোক সবচেয়ে বড় শক্তি।