সন্তান, স্বামী নিয়ে ছিল সংসার। আপাতভাবে তনুজা মণ্ডলের সংসার সুখেরই মন হয়েছে সকলের। ৬ থেকে ৭ বয়সে এর আগে নরেন্দ্রপুরের মৌলিহাটিতে তনুজা মণ্ডলের ছোট ছেলের আকস্মিক মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাতেও তনুজার বিরুদ্ধে ছিল অভিযোগ। এরপর সদ্য বড় ছেলে ৮ বছরের দেবজিতের মৃত্যুর পর শোরগোল পড়ে যায়। জানা যায় থানায় আত্মসমর্পণ করেন তনুজা। কিন্তু কেন খুন? কীসের জেরে খুন? পুলিশি জেরায় তনুজা মণ্ডল যা জানিয়েছেন, তা হাড়হিম করা ঘটনা।
মৌলিহাটির প্রসেনজিৎ মণ্ডলের স্ত্রী তনুজার বিরুদ্ধে তাঁর পুত্র সন্তানকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে। তথ্য বলছে, পুলিশের কাছে ছেলেকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন তনুজা। জানা গিয়েছে, রাগের মাথায় ছেলেকে খুন করেন তিনি। গোটা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তনুজা। জানা যাচ্ছে, ঘটনার দিন মায়ের গলা জড়িয়ে আদরও করেছিল ছোট্ট ৮ বছরের দেবজিৎ। তারপর খেতে চেয়েছিল চাউমিন। আর সেই চাউমিন খেতে খেতেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে দেবজিৎ। অভিযোগ, পিছন থেকে মা তনুজা তখন ছেলের গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে খুন করতে উদ্য়ত হন।
ঘটনার দিনটি ছিল শনিবার। ছেলেকে খেলতে যেতে বারণ করেছিলেন তনুজা। তা সত্ত্বেও সেদিন দেবজিৎ খেলতে গিয়েছিল। তবে খানিক বাদেই ফিরে এসেছিল সে। এসেই মাকে জড়িয়ে ধরে আদরও করে দিয়েছিল ছোট্ট দেবজিৎ। খেতে চেয়েছিল চাউমিন।মা তনুজা তা তৈরিও করে দেন। সেদিন টিভি চালিয়ে চাউমিন খাচ্ছিল দেবজিৎ। জানা যাচ্ছে, তখনই ছেলেকে ওড়না দিয়ে পিছন থেকে ফাঁস দেন তনুজা। ছেলে তীব্র চিৎকার করে। টিভির শব্দ জোরে থাকায় বাইরে কেউ তা শুনতে পায়নি। মায়ের হাতের রান্না খেতে খেতেই মায়ের লাগানো ফাঁসে মৃত্যু হয় দেবজিতের। এমনই অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কেন এই খুন? জানা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে সেদিন মেজাজ খিঁচড়ে ছিল তনুজার। আর তার জেরেই ছেলের গলায় লাগিয়ে দেন ওই মরণ ফাঁস। ছটফট করতে থাকা দেবজিত ধীরে ধীরে নিথর হয়ে যায়। শেষবার চাউমিন খেতে চেয়েছিল। সেই চাউমিন খেতে খেতেই মৃত্যু হয় দেবজিতের। এরপর তার নিথর দেহ কম্বলে চাপা দিয়ে শুইয়ে দেন তনুজা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তনুজা। সোজা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, লক আপের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তনুজা। বারুইপুর মহকুমা আদালতের নির্দেশে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে রয়েছে তনুজা। বুধবার ফের তাঁকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে। এই খুন ঘিরে নানান বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তনুজার কোনও মানসিক সমস্যা রয়েছে কি না, সেই দিকটিও।