কোচবিহারে পরাজিত হয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তবে ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগে পুরো আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। এমনকী কোথাও ভোটপর্বে কোনও অশান্তি হয়নি বলে দাবি করেছিলেন নিশীথ প্রামাণিক কিন্তু ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেই দেখা যাচ্ছে তিনি অন্য কথা বলছেন।
নিশীথ প্রামাণিক বলেন, যে মেশিন সিল করা হয়েছে। গালা সিল করে লক করা হয়েছে। পরবর্তী সময় সেই ইভিএমের নম্বর বদল কীভাবে যায়। কাউন্টিং এজেন্টরা এই অভিযোগ করেছেন। সেই অনুসারে আমরা পদক্ষেপ নেব। সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত এলাকায় সেখানে একই ব্যক্তি বার বার গিয়ে ভোট দেওয়া হয়েছে। ছাপ্পা ভোট হয়েছে। বলেন নিশীথ।
শুভেন্দু বলেন, কোচবিহারের ব্যাপারে খোঁজখবর করছি। কোচবিহারের ব্যাপারে তথ্য় জোগাড়া করার পরে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতীম রায় বলেন, হারের বিষয়টা তিনি মানতে পারছেন না। এখন নানা অজুহাত খাড়া করছেন।
আর বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, নিজের দোষেই পরাজিত হয়েছেন নিশীথ প্রামাণিক।
এদিকে গোটা বিষয়টি নিয়ে এবার নতুন করে জলঘোলা হতে শুরু করেছে। নিশীথ প্রামাণিকের হার কার্যত আয়নার সামনে দাঁড় করিয়েছে কোচবিহারের বিজেপিকে। উত্তরবঙ্গে একের পর এক আসনে বিজেপি জিতে গেলেও কেবলমাত্র কোচবিহারে পরাজিত। এত বড় হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত।
এর মধ্য়েই নিশীথকে ঘিরে নানা জল্পনা ছড়াচ্ছিল। কর্মীরা যখন ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে ঘরছাড়া, তারা আশ্রয় নিয়েছেন পার্টি অফিসে তখন কয়েকদিন তাঁর দেখা মিলছিল না। ফের এদিন কোচবিহারে দেখা যায় তাঁকে।
তবে নিশীথের হারের পেছনে কোচবিহারের কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অন্য কথা।
তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি। প্রায় ৩৯ হাজার ২৫০ ভোটে পরাজিত।
বিগত দিনে তৃণমূলেই ছিলেন নিশীথ। দিনহাটার ছোট্ট গ্রাম ভেটাগুড়িতে বসেই রাজনীতি করতেন। পরবর্তী সময়ে যুব তৃণমূলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। ভেটাগুড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও হয়েছিলেন তিনি। তবে তৃণমূলে থাকাকালীন মাদার তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর রেষারেষি ছিল মারাত্মক। এমনকী সেই সময় খুব দ্রুত তিনি রাজ্য তৃণমূল যুবারও ঘনিষ্ঠও হয়ে গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। এরপর কোচবিহারের সাংসদ হয়ে যান তিনি। সেবার ৫৪ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। এমনকী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়ে যান তিনি। সেই শুরু।
অনেকের মতে, এরপর থেকেই ক্রমেই বদলাতে থাকেন নিশীথ। ভেটাগুড়ির সেই গ্রামের সঙ্গে কার্যত দূরত্ব তৈরি হতে থাকে তাঁর। বলা ভালো কোচবিহারের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। এমনকী জেলা বিজেপির নেতৃত্বও তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন না। এনিয়ে দলের অন্দরেও অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
মাঝেমধ্যে যখন গ্রামে ফিরতেন তখন চারপাশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুরক্ষা বলয়। গ্রামের সহজ সরল মানুষ দূর থেকে দেখতেন সবটা। তবে কি এই অহঙ্কারেরই জবাব দিলেন সাধারণ মানুষ?