কর্তব্যরত অবস্থায় আবারও আক্রান্ত হতে হল এক সরকারি চিকিৎসককে। রোগীর চিকিৎসা ও তাঁকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা নিয়ে ঝামেলার জেরে ওই চিকিৎসককে হেনস্থা ও তাঁকে মারধর করার অভিযোগ উঠল পরিজনদের বিরুদ্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতোই রবিবারও কাজলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখছিলেন ডা. মিন্টু দে। ইতিমধ্যে দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন তাঁর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়রা। তাঁরা জানান, বাজকুল রোডে বাইক দুর্ঘটনার ফলে ওই ব্যক্তি আহত হন। তাঁর কাঁধে চোট লাগে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনোর পরই আহতের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। তাঁকে পরীক্ষা চিকিৎসক জানতে পারেন, ওই রোগীর 'কলার বোন' ভেঙে গিয়েছে। এর চিকিৎসা করার মতো পরিকাঠামো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত না থাকায় আহত ব্যক্তিকে তমলুক জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেন চিকিৎসক।
অভিযোগ, রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হতেই ক্ষেপে যান তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন। তাঁরা প্রথমে চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, ওই ব্যক্তি কেন অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে এবং কেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই তাঁর সম্পূর্ণ চিকিৎসা করা হচ্ছে না?
কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা পরিকাঠামো রয়েছে, সেই মতোই ওই রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু, ভাঙা হাড় সারাতে গেলে বড় হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু, রোগীর পরিজনরা এতে আপত্তি জানান।
এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি। তা গড়ায় হাতাহাতিতে। রোগীর আত্মীয় ও বন্ধুরা এই সময় চিকিৎসককে গালিগালিজ ও মারধর করেন বলে অভিযোগ। যার কিছুটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরাতেও বন্দি হয়। আক্রান্ত চিকিৎসকের অভিযোগ, হামলাকারীরা মদ্যপ ছিলেন। তাঁরা চিকিৎসকের কোনও যুক্তিই কানে তুলতে চাননি।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ওই স্বাস্থ্য়কেন্দ্রে পৌঁছয় ভগবানপুর থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সম্প্রচারিত হতেই নানা মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে।
আরজি কর কাণ্ডের আবহে যেখানে বাংলাজুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছে সমাজের সকলস্তরের মানুষ, সেখানে কিছু জনের মানসিকতার যে কোনও বদল হয়নি, এদিনের এই হামলার ঘটনাই তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল।
প্রসঙ্গত, আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে রবিবারও পথে নেমেছে কলকাতাবাসী। শহরের নানা প্রান্তে চলছে মিছিল, জমায়েত। তাতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা যেমন অংশগ্রহণ করেছেন, তেমনই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হয়েছেন অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিরাও।