মানুষ ক্ষেপে গেলে যে কি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা ভালোই বুঝতে পারছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর, সেই কারণেই মানে মানে যার যা জমি, তাকে তা ফেরত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে! সন্দেশখালি আন্দোলন ও পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের জমি ফেরত প্রসঙ্গে এমনই মত স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের।
সরকারি তথ্য বলছে, সন্দেশখালি আন্দোলনের পর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় যে শিবিরগুলি করা হয়েছিল, সেই শিবিরগুলিতে গত কয়েক মাসে অন্তত হাজার খানেক অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে সেই অভিযোগগুলির নিষ্পত্তি করছে। ফলস্বরূপ, অনেকেই তাঁদের হৃত সম্পত্তি ফেরত পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের হাতে রীতিমতো হেনস্থা হতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে। শাসকদলের নেতাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশের নজর কেড়েছে।
শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারের মতো নেতারা গ্রেফতার হতেই এলাকাবাসী তাঁদের উপর শাসক শিবিরের দীর্ঘদিন ধরে চলা জোর-জুলুম ও অত্যাচার নিয়ে সরব হন। তাঁরা একসুরে অভিযোগ করেন, তাঁদের জমি, বাড়ি, পুকুর জবরদখল করেই ফুলেফেঁপে উঠেছেন শেখ শাহজাহান ও তাঁর অনুগামীরা।
গণ-আন্দোলনের প্রবল চাপে এরপর সন্দেশখালিতে পুলিশের বিশেষ শিবির করা হয়। একাধিক শিবিরে নিজেদের জমি, পুকুর চুরির অভিযোগ জানান ভুক্তভোগীরা। এত দিনে সেই লড়াইয়ের সুফল পাচ্ছেন তাঁরা। একে একে ফেরত পাচ্ছেন লুট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি।
আনন্দবাজার প্রত্রিকায় (অনলাইন) প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এক বাসিন্দার প্রায় ১৬ শতক জমি দখল করে নিয়েছিল স্থানীয় এক প্রভাবশালী। এটি সন্দেশখালি-১ ব্লকের ন্যাজাট থানা এলাকার অন্তর্গত বয়ারমারি-২ পঞ্চায়েতের ঘটনা।
ওই জমির আসল মালিক জানিয়েছেন, জমি দখলের পরই পুলিশে নালিশ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তখন তাঁর অভিযোগে আমল দেওয়া হয়নি। কিন্তু, আন্দোলনের পর ছবিটা বদলে গিয়েছে। পুলিশের তরফে সম্প্রতি জমি ফেরত দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, ওই পরিবার তাদের জমির লিজের টাকাও ফের পেতে শুরু করেছে।
একই ঘটনা ঘটেছে ন্যাজাট থানার কানমারি এলাকায়। স্থানীয় কয়েক জন মাতব্বর এলাকারই এক চাষির জমি দখল করে নিয়েছিল। সম্প্রতি সেই জমিও পুলিশের উদ্যোগে ফেরত পেয়েছেন ওই কৃষক।
সরবেড়িয়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন তাঁর পাকা বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। গাছ কেটে ওই বাসিন্দার জমি নিজের নামে নথিভুক্ত পর্যন্ত করিয়ে নিয়েছিল সিরাজউদ্দিন। ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পালাতে বাধ্য হয়েছিল ভুক্তভোগী পরিবারটি। সন্দেশখালি আন্দোলনের পর পরিবারটি গ্রামে ফেরে। ফিরে পায় নিজেদের হারানো সমস্ত সম্পত্তি।
পরিস্থিতি যে বদলেছে এবং সেই বদল যে ইতিবাচক, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের কথাতেও। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, জমি, বাড়ি, পুকুর দখলের কয়েকশো অভিযোগের মীমাংসা ইতিমধ্যেই করা হয়ে গিয়েছে। বাকি অভিযোগগুলিও খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।
আর স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কী বলছেন? তাঁরা বলছেন, জমি দখলের মতো বেআইনি ঘটনা তাঁরা কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না! ব্যবস্থা যা নেওয়া প্রশাসনই নেবে। আইন মেনেই সর্বত্র পদক্ষেপ করা হচ্ছে।