'ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্ত সম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঘটনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রবল বৃষ্টি ও তার জেরে ভয়াবহ ধসে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ । পাহাড় থেকে তরাই - সব জায়গাতেই দুর্ভোগের চিত্র । নদী উপচে পড়ছে, সেতু ভেঙে গিয়েছে, রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শোকস্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী
প্রকৃতির তুমুল তাণ্ডবে কার্যত তছনছ উত্তরবঙ্গ। এই বিপর্যয়ের জেরে উত্তরবঙ্গে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এরমধ্যে পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ে ধস নেমে অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলি বন্ধ করেছে জিটিএ। একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। ভূমিধসের জেরে পাহাড়, সমতল বিচ্ছিন্ন। বেড়াতে গিয়ে হোটেলে বন্দি হয়ে আতঙ্কে প্রতি মুহূর্ত কাটাতে হচ্ছে পর্যটকদের। এই আবহে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানান, ‘দার্জিলিংয়ে সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় আমি মর্মাহত। যাঁরা নিজেদের প্রিয়জনকে হারালেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। আমি আশা রাখি, আপনাদের এই ক্ষত সেরে যাবে।’ মোদীর সংযোজন, ‘দার্জিলিংয়ে একটি সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। যারা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।' তিনি আরও লেখেন, 'দার্জিলিং এবং আশেপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টি এবং ভূমিধসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্ত সম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ রবিবার নবান্ন থেকে রাজ্যের বিপর্যয় পরিস্থিতির উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নিয়ে শিলিগুড়ি রওনা দেবেন তিনি। এক্স বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'গতরাতে উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে ভুটান ও সিকিম থেকে অতিরিক্ত জলের চাপ এসে তিস্তা-সহ অন্যান্য নদীগুলিতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।এই পরিস্থিতিতে কয়েকজন ভাই-বোনকে হারিয়েছি আমরা। তাঁদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই। রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা পৌঁছে দেবে।' দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মিরিক, মাটিগাড়া, কালিম্পং-এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। শনিবার রাত থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্যের ডিজিপি, উত্তরবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে একাধিক ভারচুয়াল বৈঠক করেছেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন গৌতম দেব ও অনীত থাপার মতো জনপ্রতিনিধিরাও।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'আমি নিজে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং সোমবার মুখ্যসচিবকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি।'
একই সঙ্গে পর্যটকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, 'উত্তরবঙ্গে যারা পর্যটনে গিয়েছেন, তাঁরা এখন যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। পুলিশ তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে দেবে। কোনও রকম চিন্তা করার দরকার নেই, উদ্ধারকার্য ও খরচ সম্পূর্ণ রাজ্যের দায়িত্ব।' নবান্ন ও সব জেলা সদরেই চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে কেউ সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন নবান্নের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল রুমে, ০৩৩-২২১৪-৩৫২৬ / ০৩-২২৫৩-৫১৮৫, টোল ফ্রি নম্বর: ৮৬৯৭৯-৮১০৭০/ ১০৭০।