অরুণাভ রাহারায়: ৯ মে অর্থাৎ ২৫ শে বৈশাখ রবিঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে শহরে আসছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর এ নিয়েই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ‘খোলা হাওয়া’ নামক এক সংস্থার পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সাইন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। ‘আমাদের রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষনামের সেই অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা অমিত শাহ। একই মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ড. স্বপন দাশগুপ্ত।
বিষয়টি একেবারেই ভালো চোখে দেখছেন না বাংলার শিল্প-সাহিত্য মহলের একাংশ। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনায় সরব হয়েছেন অনেকে। একনকী এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ ও ভোটের প্রচার খুঁজে পাচ্ছেন বাংলার দুই সুপরিচিত চিত্রশিল্পী। যোগেন চৌধুরী ও শুভাপ্রসন্ন ২৫ শে বৈশাখ উপলক্ষ্যে অমিত শাহর বাংলায় আসাকে একেবারেই ভালো চোখে দেখছেন না। একই মত প্রকাশ করেছেন কবি সুবোধ সরকার।
চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, "বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বমানবতার কথা বলেছেন। আর বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথকে পছন্দ করে। সামনে যেহেতু ভোট তাই বাঙালির সঙ্গে একটা সেতুবন্ধন করতে পারলে সুবিধা হয়। সেই কারণেই বিজেপি নেতাদের এমন প্ল্যান। এর মধ্যে ভোটের প্রচার ছাড়া কোনও আন্তরিকতা দেখছি না। বাঙালি যেহেতু রবীন্দ্রমনস্ক তাই বাঙালিকে দলে টনতে হলে রবীন্দ্রস্মরণ করতেই হবে।"
বিশ্বভারতীর প্রসঙ্গ টেনে যোগেন বাবু বলেন, "রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর বেহাল দশা আজ। রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁদের সত্যিকারের ভালোবাসা থাকলে এমনটা হত না। সেখানে অমর্ত্য সেনকে হেনস্থা করা হচ্ছে। সামান্য জমির জন্য ভারতরত্নকে হেয় করা হচ্ছে। আমি তার প্রতিবাদ করি।"
এক্ষেত্রে দ্বিতাচিতা দেখতে পাচ্ছেন যোগেন চৌধুরী। তিনি বলেন, "অমর্ত্য সেন নোবেলজয়ী। তাঁকে বিশ্বভারতী থেকে যাঁরা উচ্ছেদ করছেন তাঁরাই আবার নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস পালনের জন্য ব্যতিব্যস্ত। শান্তিনিকেতনে সেই জমি ইতিমধ্যেই নিউটেশন হয়ে গিয়েছে অমর্ত্য সেনের নামে। তারপরেও তাঁকে বিরক্ত করা হচ্ছে। এসবের জন্যই ২৫ শে বৈশাখের সেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মেছে।"
বাংলার আরেকজন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রশন্ন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানিয়েছেন, "দেশের শাসনভার যাঁদের হাতে রয়েছে তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ তুচ্ছ। রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন হচ্ছে ভোটের জন্যে। তাঁদের শিক্ষদিক্ষা সংস্কৃতিতে কোথাও রবীন্দ্রনাথ নেই। সেজন্য এরা কলকাতায় এসে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করে তথাকথিত ভোটারদের কিছুটা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তার জন্য নাচা-কাদা যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলো করছেন। যেসব বাঙালি সত্যিকারের রবীন্দ্রপ্রেমিক তাঁদের কোনও হেলদোল এর মধ্যে নেই। বাঙালি জানে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানাতে নয়, ভোটের স্বার্থে এই রবীন্দ্রজয়ন্তীর উদ্যোগ।"
তিনি আরও যোগ করেন, "বিজেপি হিন্দুত্বের সারাংশ বোঝে না। হিন্দুত্বের সবচেয়ে বড় শক্তি সংযম। সকলকে সুন্দর ভাবে গ্রহণ করা। হিন্দুত্ব পালনের জন্য সংযমের প্রয়োজন সেটা এঁরা বিশ্বাস করে না। সেই কারণে হিন্দু ধর্মকেও সঠিকভাবে জানতে পারেনি এঁরা।"
কবি সুবোধ সরকার হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানিয়েছেন, “খুব ভালো কথা ওঁরা রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ ওঁরা তো সিলেবাস থেকে উপড়ে ফেলে দেন। রবীন্দ্রনাথকে কি ওঁরা সহ্য করতে পারেন? আমি শুধু বলব রবীন্দ্রনাথের ন্যাশনালিজম প্রবন্ধটি, যার হিন্দি অনুবাদও আছে, সেটা ওঁদের প্রধান পাঠিয়ে পড়তে বলুন। তারপর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে কলকাতায় আসতে বলুন। পড়ে দেখুন রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস পালন করতে পারবেন কিনা। রবীন্দ্রনাথের যে দর্শন, ভারতবর্ষ সম্পর্কে তাঁর যে গভীর ধারণা, গভীর বেদনা সেটা ওঁরা বুঝতে পারেন বলেই রবীন্দ্রনাথকে উপড়ে ফেলতে চান। রবীন্দ্রনাথকেই আবার তাঁরা বরণ করে নিতে কলকাতায় আসছেন।"
এই 'বরণের' মধ্যে ভোটের প্রচারের গন্ধ পাচ্ছেন তিনি। কবি সুবোধ সরকারের কথায়, "রবীন্দ্রনাথকে সরিয়ে রাখলে যে ভাঁড়ারে টান পড়বে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একেই তো ওঁরা বাংলায় ভাঁড়ে মা ভবানী। সবাই জেনে গিয়েছে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ওঁদের ভয়, আতঙ্ক ও আশাঙ্কার কথা। কিছুই লাভ হবে না, একেবারে গোহারা হারবে।"