‘কুণালবাবু (তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ) কী বললেন তাতে কিছু যায় আসে না। আমাদের (আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের) মধ্যে কোনও সংঘাত নেই। মতপার্থক্য অবশ্যই থাকে। আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে সর্বসম্মতভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে চলাই হল গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। যে কোনও গণতান্ত্রে এভাবেই কাজ হয়।’
গত শনিবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার আগে জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে মতপার্থক্য ও সংঘাত হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবির স্বপক্ষে রবিবার একটি অডিয়ো রেকর্ডিংও প্রকাশ্যে আনেন তিনি। সেই প্রসঙ্গেই উপরোক্ত মন্তব্যটি করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন আন্দোলনরত এক জুনিয়র চিকিৎসক।
সূত্রের দাবি, আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরেও নানা বিষয় নিয়ে প্রবল চাপ রয়েছে। শনিবার যখন জুনিয়র চিকিৎসকদের ৩০ জন প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন, সেই সময়েও বাকি আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
মূলত এই অবস্থানরতদেরই দাবি ছিল, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কী আলোচনা হচ্ছে, তা তাঁরা সরাসরি জানতে চান। সেই কারণেই বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পরে তারা কিছুটা নমনীয় হলেও শেষমেশ শনিবারের বৈঠক হয়নি।
এমতাবস্থায় রবিবার কুণাল ঘোষ দাবি করেন, আন্দোলনকারীদের একাংশ আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি কাজে ফিরতে চাইলেও অন্য একটা অংশ তাতে বাধা দিচ্ছে। এমনকী, অবস্থানগত ফারাকের জন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাত শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন কুণাল। এই প্রেক্ষিতেই সংশ্লিষ্ট অডিয়ো রেকর্ডিংটি প্রকাশ্যে আনেন তিনি।
এরপরই শুরু হয় নতুন জল্পনা। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি আর জি কর কাণ্ডে সুবিচার চেয়ে যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁরাই দ্বিধাবিভক্ত? বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলা হলে তাঁরা এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেন।
একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আন্দোলনকারীরা একাবারও সংশ্লিষ্ট অডিয়ো রেকর্ডিংটি যে আসল নয়, এমন দাবি করেননি। বরং, তাঁরা মেনে নিয়েছেন ওই অডিয়ো রেকর্ডিং তাঁদেরই অবস্থান মঞ্চের। তাহলে?
এই প্রশ্নের উত্তরে আন্দোলনরত এক জুনিয়র চিকিৎসক জানান, তাঁদের এই লড়াই এখন একটি সামাজিক আন্দোলনে উন্নীত হয়েছে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি সমাজের সকলস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। তাঁদের সকলেরই নিজস্ব বক্তব্য রয়েছে। তাতে ব্যক্তি বিশেষে নানা পার্থক্যও রয়েছে।
আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরাও এর ব্যতিক্রম নন। নানা বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং সেটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে আন্দোলনকারীরা অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়েছেন। বরং, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় যেমন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে বোঝাপড়া করে সর্বসম্মতভাবে এবং একজোট হয়ে কাজ করা হয়, এক্ষেত্রেও সেটাই করা হচ্ছে এবং হবে।
অন্তর্কলহের কথা উড়িয়ে দিয়ে কুণাল ঘোষের দাবি প্রসঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকরা আরও জানান, ওই তৃণমূল নেতা আগেও মিথ্যা দাবি করেছিলেন যে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা নাকি তাঁর কাছে গিয়েছিলেন! তাই, একটি অডিয়ো রেকর্ডিং প্রকাশ করে আন্দোলন স্তিমিত করার উদ্দেশ্যে তিনি কী বললেন, তাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।