রাজ্য রাজনীতি সরগরম লোকসভা ভোটের আবহে। রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যতবারই এসেছেন, ততবারই তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন তোষণ নীতিকে হাতিয়ার করে। কখনও নরেন্দ্র মোদী, তো কখনও অমিত শাহ, বারবারই ইন্ডিয়া জোটের শরীকদের বিরুদ্ধে মূলত সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগই উঠে এসেছে তাঁদের বক্তব্যে। সম্প্রতি পাঁচ লাখ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হওয়া নিয়েও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়েনি বিজেপি। এরই মধ্যে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভারত সেবাশ্রম সংঘের কার্তিক মহারাজের রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। একই সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয় ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশনের নাম। রাজনৈতিক বিরোধীতা সত্ত্বেও অধীর চৌধুরীর সুরও মিলে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এই আবহে HT বাংলায় মুখ খুললেন কার্তিক মজারাজ। এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন, শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর লড়াই চলবেই।
HT বাংলা Exclusive-ভোটের সাতকাহন- 'পর' আর ঘর কখনও এক হয় না, বিষ্ণুপুরে আমার প্রেস্টিজ ফাইট-সুজাতা
HT বাংলার তরফে তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয়-
প্রশ্ন- এত অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে, সেগুলো কী ঠিক? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধীর চৌধুরিও একই কথা বলেছেন?
কার্তিক মহারাজ- বাংলার মানুষ আমায় চেনে, গোটা বাংলার মানুষ আমার পিছনে রয়েছে, তাঁরা জানেন। বহরমপুরের মানুষ জানেন কার্তিক মহারাজ কেমন। তবে অধীর চৌধুরী অনেক উপকারও করেছে মিশনের, কেন এমন বলেছে জানি না। আমার আইনি বিষয় যারা দেখেন, তাঁরা বিষয়টি দেখছে। অবশ্যই আমরা এগোব।
প্রশ্ন- তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি তোষণের অভিযোগ তুলেছে, কিন্তু আপনি কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন?
কার্তিক মহারাজ- উনি(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) রাজ্যের প্রধান। পুলিশ, আইন সবার ওনার পক্ষে। ওনার আঁতে ঘা লেগেছে। আমার দ্বারা প্রশিক্ষিত ১২টা স্কুলে ৮০ শতাংশ মুসলিম ভাইরা পরে। আমাদের সেবা প্রতিষ্ঠান কথনই সেবার সময়, সাহায্যের সময় ধর্ম, রাজনীতি কিছু দেখেনা। আমাদের কাছে আমাদের সংস্কৃতি আগে। আমি বলব না তো, কে বলবে?
প্রশ্ন- আপনার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো কী সত্যি?
কার্তিক মহারাজ-আমায় নিয়ে এত কথা বলছে, অথচ হুমায়ুন অত বড় কথা বলল, কিন্তু পার্টি থেকে এখনও ওকে কোনওরকম শো কজ করেনি। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ও তো বলেছিল,'আমরা ৭০ শতাংশ, ওরা ৩০ শতাংশ, ভাসিয়ে দেব'। এই সব বলেছিল তো। তাহলে ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না কেন?
প্রশ্ন- আপনি বিজেপির মঞ্চে গেছেন?
কার্তিক মহারাজ- এটা কখনও বিশ্বাস করা যায় যে আমি বলেছি তৃণমূল এজেন্টকে বসতে দেব না, আর ও ভয়তে ঘরে ঢুকে যাবে? আমি তো ডন নয় যে আমার ৫০০ ছেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তো সেরকম কেউ নয়। আর একা আমাকে তো নয়, রামকৃষ্ণ মিশন, ইসকন সবাইকেই জড়িয়েছেন উনি।
প্রশ্ন- এই প্রতিবাদের কাজ কি আপনি পরেও চালিয়ে যাবেন?
কার্তিক মহারাজ- এটা বাস্তবে দেখা গেছিল দেশ বিভাজনের আগে, তখন মানুষে মানুষে বিভাজন হত। এই তো কদিন আগেই শিলিগুড়ির রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুেদর ওপর আক্রমণ হল, সেটা কেন হল ? ইসকনের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। আমি কার্তিক মহারাজ, আমি আমার ধর্ম, আমার সমাজ, সংস্কৃতির জন্য লড়ব। তাতে আমার মৃত্যু হলে হবে।
প্রশ্ন- বিজেপির সঙ্গে তাহলে আপনি নেই বলছেন?
কার্তিক মহারাজ- ভারত সেবাশ্রম সংঘের ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে যে আমাদের প্রতিষ্ঠতা প্রণবানন্দজী মহারাজ নিজে হাতে শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে হিন্দু সম্মেলনের সভাপতি করেছিলেন, নিজে হিন্দু মিলন মন্দিরের আন্দোলন করেছিলেন। শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির কথা বললেই তো রাজনীতির কথা আসবে। এবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তো ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তাই প্রশংসা করেছি। তার মানেই যদি আমি বিজেপি হয়ে যাই, তাহলে তাই।
এই মূহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে রাজনৈতিকমহল বলতে বাধ্য হচ্ছে, ‘সাধু সাধু ’। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক আজ নতুন নয়। দীর্ঘ দশকের পর দশক ধরেই দেখা গেছে ধর্ম, বর্ণের ওপর নির্ভর করে প্রার্থী দেওয়া বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া ভোটের আবহে। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটের শুরুতেই কংগ্রেসের ইস্তেহারকে মুসলিম লিগের ইস্তেহার বলে প্রধানমন্ত্রী যেমন আক্রমণ করেছিলেন, তেমন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গলাতেও শোনা গেছে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘের মতো প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণের অভিযোগ। ভারতে নুন ছাড়া তরকারির মতো ধর্ম ছাড়া রাজনীতি হয় কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে এই লড়াই যে ভারতের সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ-এর জন্য খুব একটা ভালো বার্তা দিচ্ছে না, সেকথা বলাই যায়।