রবিবারের সকাল। ছুটির দিনে পাড়ার চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন এলাকারই কয়েকজন বাসিন্দা। তখনই তাঁরা দেখতে পান, পাশেই অবস্থিত একটি বেসরকারি পলিক্লিনিক থেকে বেরোলেন এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক মহিলা। মহিলার হাতে ছিল একটি বালতি। সাতসকালে সেই বালতি উপুড় করে রাস্তার পাশের নর্দমায় 'কিছু একটা' ঢেলেই চলে যান ওই 'ডাক্তার' ও মহিলা।
সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা চলে যেতেই স্থানীয় বাসিন্দারা নর্দমায় উঁকি মেরে দেখেন, সেখানে পড়ে রয়েছে একজোড়া ভ্রূণ! এরপরই স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় উপরোক্ত ওই স্বঘোষিত ডাক্তারকে। বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার এই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনাস্থল থেকে নর্দমায় ফেলে দেওয়া ভ্রূণ দু'টি উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে সোনামুখী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিয়ে গিয়েছেন পুলিশের তদন্তকারীরা।
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পলিক্লিনিকের স্বঘোষিত ওই ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের নাম মানস মুখোপাধ্যায় ওরফে 'পাহাড়ী বাবু'। তিনি আদৌ চিকিৎসক কিনা, তা যাচাই করে দেখছে পুলিশ। ধৃতের শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই পলিক্লিনিকে বেআইনিভাবে গর্ভপাত করানো হয়। অর্থের বিনিময়ে এই কাজ করা হয় বলে দাবি করছেন তাঁরা। যদিও সংশ্লিষ্ট পলিক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত, পলিক্লিনিকের বাইরে দেওয়ালে যে 'সাইন বোর্ড' আঁকা হয়েছে, সেই অনুসারে এই কেন্দ্রটি আদতে ধৃত 'পাহাড়ী বাবুর চেম্বার'। এমনকী, ওই দেওয়াল লিখনে তাঁকে 'ডা. মানস মুখোপাধ্যায়' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও রবিবারের ঘটনার পর ধৃত ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না। এমনকী, তিনি নাকি ওই স্থানে থাকেনও না। তাঁর পালটা দাবি, ২০২৩ সাল থেকে ওই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন তিনি।
পুলিশ অবশ্য সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছে। বিষ্ণুপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রকাশ দাস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আদৌ চিকিৎসক কিনা, সেই সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনার দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। দোষীরা শাস্তি পাক।